কালের চিতা ফ্ল্যাপ থেকে ~ ‘চিতা’ শব্দটি মনে জাগলেই— অবচেতনভাবে মনের কোণে ভেসে ওঠে, দাহ্যমান আগুনের তাণ্ডবলীলা । প্রতীক গুপ্ত’র উপন্যাস ‘কালের চিতা’র পরতে পরতেও রয়েছে এই চিতাগ্নির দৃশ্যমান অনুভব। উপন্যাসের মূলচরিত্র ‘বলরাম পাল’; যার জীবন শুরু হয়েছিল— ছবির মতো ছায়াশীতল এক প্রত্যন্ত গ্রামে। যে গ্রামের মানুষে মানুষে ছিল সাম্প্রদায়িক সংহতি; ছিল একের প্রতি অপরের অনাবিল হৃদয়ের টান ও সখ্য! জাত-পাত; ধর্মবলয় সবকিছু তুচ্ছ করে একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকার যে স্বাভাবিক যাপনচিত্র আমাদের গ্রামগুলোতে দেখতে পাওয়া যেত; সেই চিত্র বিদ্যমান ছিল বলরাম পালের গ্রামেও! কিন্তু সময়ের আবর্তে সেই প্রেক্ষাপটে চিড় ধরে। মানুষের সীমাহীন স্বার্থ আর রাজনৈতিক সহিংসতা কেড়ে নেয় সেইসব সম্প্রীতির অতীত। মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনা পাল্টে যায়, শুরু হয় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হিড়িক। স্বার্থান্বেষী কিছু অমানুষের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জীবনযোদ্ধা বলরাম পাল, যিনি সব হারিয়েও আঁকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছেন আবাল্য বেড়ে ওঠা গ্রাম ও প্রিয় দেশটাকে। ভাগ্যচক্রে তিনি সব হারিয়ে আশ্রয় পান পাশের গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। সেই পরিবারে বালরাম পালের যাপনের চালচিত্র নিয়েই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। এই উপন্যাসে আরও উঠে এসেছে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের শ্রদ্ধাবোধ, ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের মমত্ববোধ, সর্বোপরি ফুটে উঠেছে একজন ভিন্নধর্মের লোককে আশ্রয় দিয়ে একটি মুসলিম পরিবারের মহানুভবতা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সকল ধর্ম, বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে মানুষ। কালের চিতা’য় প্রতীক গুপ্ত মূলত একজন মানুষের আড়ালে; শতশত মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অগ্নিই জ্বালিয়ে গেছেন বোধ ও প্রজ্ঞার আলোকে। আমি এই উপন্যাসের পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করি।