গ্লোবাল ভিলেজের ভৌগলিক বিভাজনের প্রাচীর দিনকে দিন উঁচু ও মজবুত হলেও তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে আজকের ভার্চুয়াল দুনিয়া আমাদের মাঝে বিরাজমান সকল বাউন্ডারীকে কার্যত মুছে দিয়েছে। আমাদের সমাজব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়েছে আদিগন্তে; নীলাকাশকে বানিয়েছে একমাত্র ছাদ। এতো কিছুর পরেও, বর্তমান দুনিয়ায় মানুষ যেন গুহাবাসী মানুষের চেয়েও বেশি অসুখি, অনিরাপদ ও অসহায় বোধ করছে; এটি অন্য কোথাও নয়, তার নিজ পরিবারেই। মানুষ নানা সময়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে নিরাপত্তাহীনতা কিংবা সঙ্গহীনতায় ভুগলেও এর আগে সে নিজ পরিবারে কখনই এমন নিঃসঙ্গতা অনুভব করেনি। ফলে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ পরিবার জীবনের আকর্ষণ হারিয়ে, পরিবারহীন জীবনে অভ্যস্ত হতে চলেছে। কিন্তু কেন এমনটি হচ্ছে? অথচ মানবতার জন্য পরিবার ব্যবস্থা হলো অন্যতম রব্বানী উপহার- যার ভিত্তি স্থাপিত হয় দয়া ও ভালোবাসার খুঁটির উপরে। এখানে দ্বিমত করার কিছু আছে কি (?)- পরিবার নামক এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটির ভালো-মন্দের উপরে ব্যক্তি মানুষের সুখ-শান্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। দ্বীন প্রিয় মানুষকে গভীর মনোযোগে ভাবতে হবে যে, আজকে কেন একদল মানুষের জল্পনা-কল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এটির বিনাশ সাধন করা? পরিবার যেন তাদের সকল মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? অহির্নিশি তাদের বয়ান, এই ব্যবস্থাপনার দেয়াল ভাঙ্গতে পারলেই যেন তাদের জীবন সার্থক হয়ে যাবে! এমন জটিলতর পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই যাঁরা পরিবার নামক এ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রাণময় ও প্রিয়প্রাঙ্গন বানানোর স্বপ্নে বিভোর সে সকল স্বপ্নবান মানুষের জন্য ইস্যুভিত্তিক আলোচনা ও সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশের প্রয়াস আছে ‘জীবনকথা: পরিবার থেকে সমাজ’ শীর্ষক এ গ্রন্থখানিতে। এখানে গুরুত্ব সহকারে প্রতিফলিত হয়েছে, কিভাবে কালোত্তীর্ণ ও শাশ্বত জীবনদর্শন ইসলামের আলোকে একটি কাঙ্ক্ষিত পরিবার ও সমাজ গড়া সম্ভব- যেখানে ব্যক্তি থেকে সমষ্টির বিশ্বাস, চিন্তা-কর্মের সকল পরিমণ্ডলকে পরম যত্নে শুধু আগলেই রাখবে না, পাশাপাশি মানুষের উভয় জীবন তথা ইহ-পরকালে চূড়ান্ত মুক্তির পথও দেখাবে; যেখানে আমেনা দুলাল রহমাতুল্লিল আলামীনের জীবননীতি অনুসরণ করে জগতসমূহের মহান রবের সন্তুষ্টিময় এক পবিত্র জীবনলাভ করা যাবে, ইন শা আল্লাহ।
ড. মীর মনজুর মাহমুদ। একাধারে লেখক, শিক্ষক, গবেষক, প্যারেন্টিং কাউন্সিলর ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। জন্ম কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ গ্রামে। শৈশব-কৈশোরে বেড়ে উঠেন স্কুল শিক্ষক বাবার নিবিড় তত্ত্বাবধানে। পড়াশুনা করেছেন ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে। কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ও পি-এইচ.ডি. ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া’র আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে। কর্মজীবন শুরু করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রায় দুই দশক পড়িয়েছেন সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, আই আই ইউ সি ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা (খ-কালীন) করছেন। পাশাপাশি সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (সিএডিটি) নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি ও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্বপ্নচারী ড. মাহমুদ বেশকিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন: তুরস্কভিত্তিক এশিয়ান ফিলোসোফিক্যাল এসোসিয়েশন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনীস্থ লিডারশীল ইউনিভার্সাল কলেজ, ইউএসএ-ভার্জিনিয়াভিত্তিক একাডেমিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি) প্রমুখ-এর সাথে যুক্ত। প্রাণময় আদর্শ পরিবার ও ঐক্যবদ্ধ মানবিক সমাজ বির্নিমাণে চারপাশকে পরিগঠিত ও অনুপ্রাণিত করতে জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে ড. মাহমুদের স্বাচ্ছন্দ্য উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তিনি প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন এই স্বপ্নেরই সারথি হিসেবে। ড. মাহমুদ রচিত অন্যান্য গ্রন্থসমূহ হল: অনুভবে রমাদান, ঐক্য ভাবনা, কাবাযাত্রীর অসিয়ত ও নসিহত, ছোটদের ইসলাম শিক্ষা (সহ-লেখক), Islamic Studies for Kids- Part I & II (Co-author), Family Institution Social Welfare and Welfare Society: Conventional and Islamic Approach (Co-author) এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ইমাম।