সত্যি সত্যি ভূতের দেখা পেয়েছেন। এমন [ ভাগ্যবান মানুষ ক'জন আছেন জানি না, কিন্তু ভূতের গল্প শুনতে ভাল লাগে না, এমন মানুষ বোধহয় একজনও নেই। ছোট থেকে বড়— সকলেরই প্রিয় ভূতের গল্প। সে একলা ঘরে বসে ভয়-ছমছম বুকে বই পড়াতেই হোক, কি আড্ডায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে ভূতের গল্প শোনাতেই হোক। সে এক আলাদা রোমাঞ্চ। লীলা মজুমদারের ভূতের গল্পে অবশ্য দুটো স্বাদই একসঙ্গে। পড়ার আনন্দ তো আছেই, কিন্তু আড্ডার আমেজও মিশে থাকে তাঁর লেখায়। আসলে তাঁর ভঙ্গিটিই এমন মজলিশি, জমাটি আর ফুরফুরে কৌতুকমেশানো যে, তিনি যখন ভূতের গল্প শোনান, তখন তা শুধুই ভয়ের গল্প হয়ে শেষ হয় না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সীমারেখা মুছে গিয়ে এমন একটা নতুন রসের সৃষ্টি হয়, যেখানে সব ছাপিয়ে থাকে মজা। আর এই মজা যাতে বজায় থাকে, সেই কারণেই বোধকরি, লীলা মজুমদারের ভূতের গল্পে ভূত ঠিক ভূতের তথাকথিত বীভৎস চেহারা নিয়ে হাজির হয় না। অর্থাৎ, ভাঁটার মতো চোখ, মুলোর মতো পাত, মাসে ভাই, শুধু অস্থিসার এমনতরো মামুলি ভূত তাঁর গল্পে অনুপস্থিত। তাঁর গল্পে ভূতের চেহারা নিপাট ভালমানুষের মতন, শুধু হাবেভাবে মালুম হয় যে তারা ভূত। তাও তারা মানুষের যে কোনও ক্ষতি করে না, এ-কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এহেন লীলা মজুমদারের যাবতীয় ভূতের গল্প একত্র করে বেরুল এই সংকলন— ‘সব ভুতুড়ে'। সন্দেহ নেই, ছোটদের, বড়দের, সকলের জন্য এ এক দুর্দান্ত উপহার।