বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর চরিত্র সতাজিৎ রায়ের রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনীর গোয়েন্দা ফেলুদা। সববয়সী পাঠকদের একান্ত প্রিয়জন ফেলুদার ভালো নাম প্রদোষচন্দ্র মিত্র। রহস্যের জট ছাড়াতে তাঁকে দেশবিদেশের নানা জায়গায় যেতে হয়েছে। কিন্তু কলকাতার ছেলে ফেলুদাকে তাঁর নিজের এই শহরেও রহস্যের সন্ধানে কম ঘুরতে হয়নি। একটি দুটি নয়, গুনে গুনে ন'টি রোমাণ্যকর দুর্ধর্ষ কাণ্ড ঘটে গেছে কলকাতায়। অসামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিরল বিশ্লেষণী দক্ষতা নিয়ে ফেলুদা প্রত্যেকটি ঘটনার সত্যাসত্য নির্ণয় করেছেন নিজস্ব স্টাইলে । ফেলুদা একাই একশো । তবু এইসব কাহিনীতে তাঁর সঙ্গে আছেন অতিপরিচিত জটায়ু আর তপসে । এঁরা দুজনেই আবার কলকাতার বাসিন্দা ৷ সব মিলিয়ে এই-সংকলনে বাঙালির এই প্রিয় শহর আর একভাবে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে । ‘পাহাড়ে ফেলুদা’র পর এবার দুই মলাটের মধ্যে সাজিয়ে দেওয়া হল কলকাতায় ফেলুদার সমস্ত অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী '।
সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন অসম্ভব গুণী এই মানুষটি। ১৯২১ সালে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে রয়েছে তাঁর পৈত্রিক ভিটা। ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ বা ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করেছিলো যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’র জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যার মধ্যে অন্যতম হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। তবে তাঁর কাজের সমালোচকও কম ছিলো না। এসব সমালোচনার উত্তরে লেখা দুটি প্রবন্ধ পাওয়া যায় সত্যজিৎ রায় এর বই ‘বিষয় চলচ্চিত্র’-তে। কল্পকাহিনী ধারায় সত্যিজিৎ রায় এর বই সমূহ জয় করেছিলো সব বয়সী পাঠকের মন। তাঁর সৃষ্ট তুখোড় চরিত্র ‘ফেলুদা’, ‘ প্রফেসর শঙ্কু’ এবং ‘তাড়িনী খুড়ো’ যেন আজও জীবন্ত। একের পিঠে দুই, আরো বাড়ো এমন মজার সব শিরোনামে বারোটির সংকলনে লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর বই সমগ্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চলচ্চিত্র বিষয়ক ‘একেই বলে শ্যুটিং’, আত্মজীবনীমূলক ‘যখন ছোট ছিলাম’ এবং ছড়ার বই ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগেই তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘একাডেমি সম্মানসূচক পুরষ্কার' (অস্কার) প্রাপ্তি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।