মাদরাসা দুটি বিষয়ের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত—শিক্ষা ও নৈতিকতা। নবীজি এ দুটি উদ্দেশ্য নিয়েই আগমন করেছেন। এ বিষয়গুলোর অনুপস্থিতি মানুষকে বিনাশের পথে ঠেলে দেবে। কারণ, জাগতিক শিক্ষার ভিত্তি অভিজ্ঞতা, আর মাদরাসা শিক্ষার ভিত্তি ওহির ইলম। অভিজ্ঞতা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে। কিন্তু ওহির ইলম ছাড়া মানুষ পার্থিব-অপার্থিব কোনো জীবনেই প্রকৃতরূপে বাঁচতে পারে না। আবার অভিজ্ঞতায় ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু ওহির ইলমে কোনো ত্রুটি নেই। এজন্য মাদরাসাকে ইসলামের দুর্গ বলা হয়। যে দুর্গের কারণে আজও মানুষ ঐশী জ্ঞানের বিশুদ্ধ প্রস্রবণ থেকে পরিতৃপ্ত হতে পারছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়—বর্তমানে মাদরাসার দিকে সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করা হচ্ছে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছ। অপরদিকে খোদ মাদরাসাতেই প্রকৃত ‘প্রাণ' সঞ্চারণের অভাব, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে আলি মিয়া নদভি রহ.-এর চেতনামূলক বক্তব্য ও সারগর্ভপূর্ণ লেখায় আমরা গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছি। যেখানে উঠে এসেছে মাদরাসার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য, দায়িত্ব ও কর্তব্য, শিক্ষার্থীদের হতাশা থেকে উত্তরণের পথ এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যে মাদরাসার ভূমিকা ইত্যাদি। তার প্রাণবন্ত বক্তব্য ও জ্ঞানগর্ভ রচনা একদিকে সমালোচকদের মোক্ষম জবাব দেবে, অপরদিকে উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ জনগণের হৃদয়ের খোরাক মিটাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।