পাকিস্তানি দোসরদের ওপর নজর রাখা, নিয়মিত সতর্কতা টহল, যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ, অস্ত্রের যোগান, শত্রুদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই, অপারেশনের গোপন সংবাদ আদান-প্রদান, বিভিন্ন অপারেশনে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহসহ সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি ভূমিকা পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। চৌধুরী বাড়ি ক্যাম্পে অস্ত্রাগার পাহারা ও অস্ত্র সুরক্ষার দায়িত্ব পালনকালে অস্ত্র পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত থাকাকালীন অবস্থায় ট্রিগারে চাপ লেগে কানের কাছ দিয়ে চলে যায় বুলেট। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যান এই মুক্তিযোদ্ধা। ৮ ডিসেম্বর আফসার বাহিনীর নেতৃত্বে ভালুকা শত্রুমুক্ত করে, ময়মনসিংহ মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জন করেন। ফিরে আসেন বাড়িতে, বহুদূর হতে আত্মীয়স্বজনরা ছুটে আসেন ওনাকে দেখার জন্য। সেসময় ওনার বড় বোন চাঁনপুর গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে চলে আসেন ভাইকে একনজর দেখতে! চাঁনপুরের সম্ভ্রান্ত সিকদার বাড়ির বউ কোনোদিন পায়ে হেঁটে এতটা পথ পাড়ি দেননি। যাতায়াত করতেন পালকি অথবা গরুর গাড়িতে, তবে সেদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের টানে এভাবেই ছুটে আসেন বোন। মানুষ ও বোনের সেসময়ের ভালোবাসায় ফুটে ওঠে একজন মুক্তিযোদ্ধা সেদিন নিশ্চিত মৃত্যুকে জয় করে স্বাধীনতা নিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। মুক্তির একবুক ভালোবাসা হয়ে ফিরে এসেছিলেন আপনজনদের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে আংগারগাড়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। এরপর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে ভর্তি হন। সেখানেও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনের সমাপ্তিও হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। ১৯৭৬ সালে আংগারগাড়া গ্রামের শিক্ষক মো. ইনছান আলী সরকারের ছোট মেয়ে মোছাম্মত মমতাজ বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে ও দুই ছেলের জনক। ছেলেমেয়েরা সবাই সুশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। পেশাগত জীবনে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলাধীন ডুমনীঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। অবসর জীবনে নিজের কৃষিকর্ম দেখাশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। ২০১৯ সালে সস্ত্রীক পবিত্র হজ পালন করেছেন। এলাকায় একজন সরল সাদা মনের মানুষ হিসেবে সুপরিচিত। একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে এটাই স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী ও সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নাজমুল হুদা মাস্টার।
জনন্ম ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি, ভালুকা, ময়মনসিংহ। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. নাজমুল হুদা মাস্টার। মা মমতাজ বেগম গৃহিণী। পড়াশোনা ৫৯নং ডাকাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক। কালিয়াপাড়া ডাকাতিয়া মাজেদা মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর। লেখালেখি শুরু ছোটবেলা থেকেই। প্রথম প্রকাশিত লেখা আজকের আওয়াজ পত্রিকায় 'চোর' নামে একটি গল্প। বর্তমানে র্যানকন গ্রুপে কর্মরত।