শুরুতে ছিল যুগলবন্দী গােয়েন্দা। অমল সােম ও কিশাের অর্জুন। খুনখারাপি, সীতাহরণ রহস্য, লাইটার। একের-পর-এক চমকপ্রদ সত্যানুসন্ধানের কাহিনী যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, হঠাৎই চোখের আড়াল হলেন সরকারী গােয়েন্দা অমল সােম। অর্জুন অবশ্য আর খুদে সাকরেদটি নেই। তরুণ অর্জন পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আর, এই বিশ্বাস যে ভিত্তিহীন নয়, বােঝা গেল লাইটার-রহস্যের দ্বিতীয় পর্বে। সুদূর আমেরিকায় গিয়ে অর্জুন একাই উন্মােচিত করল গভীর চক্রান্তের নিবিড় জট। এই দুর্দান্ত গ্রন্থের সূচনা সেই অভিযান থেকেই ফেরার পথে। মেজরের সঙ্গে কয়েকটা দিন লন্ডনে কাটাতে চেয়েছিল অর্জুন। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক হিথরাে বিমানবন্দরে পা রাখার পূর্ব-মুহূর্তে মেজরের দেখা হয়ে গেল পুরনাে বান্ধবী মিসেস ডােরা গ্রান্টের সঙ্গে। ডােরা গ্রান্টের আরও একটা বড় পরিচয় এই যে, ভদ্রমহিলা বিখ্যাত একজন ম্যাজিসিয়ান। জাদুবলে কী পারেন, আর কী পারেন না—বলা দুষ্কর। তাে, ডােরা গ্রান্টের নিমন্ত্রণে অর্জুনদের গতিপথ গেল পাল্টে। যাবার পথে মেজর শখ করে একটা দোকান থেকে কিনলেন পেল্লাই মাপের এক জোড়া পুরনাে জুতাে। সেই জুতােজোড়ার পায়ে-পায়েই যেন সঙ্গী হল নতুন রহস্য। জুতােয় রক্তের দাগ দেখে কৌতূহলী অর্জুন জুতাের মধ্য থেকেই খুঁজে পেল সাংকেতিক এক চিরকুট। চিরকুটের সূত্র ধরে এল স্টেনলেস স্টিলের কৌটোয় লুকিয়ে রাখা একটি লকারের চাবি। কী আছে সেই লকারে ? গুপ্তধন, নাকি অন্যকিছু ? কারই বা লকার ? কীভাবে তার সংকেত লুকনাে ছিল পুরনাে একজোড়া জুতাের চোরাকুঠুরিতে ? কেনই বা এই জুতােজোড়ার সন্ধানে ঘুরছে একদল খুনী ? এই জাতীয় নানান রহস্যে আদ্যন্ত জড়ানাে এ-কাহিনীর শুরু ডাঙ্গায়, কিন্তু শেষ ? শেষ, বলা যায়, ‘বিশ বাঁও জলে। পত্রিকায় আলাদাভাবে প্রকাশিত, কিন্তু ‘জুতােয় রক্তের দাগে’রই অনুবৃত্তি ‘বিশ বাঁও জলে’র কাহিনীতে। এই অসামান্য কিশাের-কাহিনী এখন একত্রে প্রকাশিত হল—দুই মলাটের মধ্যে।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।