ভারতবর্ষের সভ্যতা মনুষ্যসৃষ্ট সভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরোনো না হলেও এটা অন্য অনেক সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক। বিস্তর লোক এবং জাতি এখানে এসেছে, মিশেছে এখানকার লোক, পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে। সংগীতে এ জন্য বাইরের কিছু ধারা এবং চর্চাকে ভারতীয় ধারায় একীভূত করে এর গুণগত উন্নয়ন সাধন করতে হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের সংগীত এ জন্য সারা দুনিয়ায় সবচেয়ে উন্নত ও উপভোগ্য। বইটিতে সংগীত বিষয়ে এই জাতীয় আলোচনা ও স্মতিচারণা রয়েছে। গানের বিষয়ে লেখা বা লিখতে পারা এমনিতে সম্ভব হয় না। এর জন্য ন্যূনপক্ষে কিছু ধারণা বা পুঁজি থাকা লাগে। কিš‘ এ বিষয়ে যে জ্ঞান লেখকের আছে, তা অপ্রতুল নিঃসন্দেহে। কুণ্ঠিত এবং বিনীতভাবে এ জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অল্প বয়স হতে সংগীতের প্রতি অনুরাগী ছিলাম আমি। কলের গানে, টেপরেকর্ডে, মিউজিক সিস্টেমে বিস্তর গান শুনেছি, সংগীতের বইও পড়েছি। গানের অনেক আসর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি, সংগীতের অনুষ্ঠান করেছি। যান্ত্রিকভাবে সংগীতের যে ক্রমবিবর্তন হয়েছে, তা দেখেছি, পরীক্ষা করার সুযোগ মিলেছে। আমি উর্দু ভাষা জানি, লিখতে পারি, হিন্দি বুঝি, বলতেও পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবসিডিয়ারিতে অন্যতম বিষয় ছিল আমার উর্দু। অল ইন্ডিয়া রেডিও (উর্দু সার্ভিস), বজমে মোশিকী, আকাশবাণী, বিনাকা গীতমালা, হামেশা গীতও কা রঙারঙ্গ কারিকুরাম (মনোহর মহাজনের ) দো পহলে দো রঙ দো গীত, রেডিও সিলোন (আমীন সায়ানি ও মোনা আলভির উপ¯’াপনায়, ২৫ আওর উনপঞ্চাশ মিটার ব্যান্ড পর), অনুরোধের আসর ইত্যাদি অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনেছি আমি এবং অনুরোধকারী শ্রোতা হিসেবে অংশ নিয়েছি। এ জন্য বাংলা এবং হিন্দু¯’ানি সংগীত বিষয়ে তুলনামূলকভাবে বুঝেসুঝে আলোচনা করতে পারা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। বইটিতে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব আছে, অনেকের মতামত ও মন্তব্য আছে। এসব তত্ত্ব, তথ্য, মতামত নিয়ে অনেক তর্কও আছে। সবকিছু বর্ণনা করতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হয়তো হয়েছে। পাঠককে এসব বিষয় বুঝে বইটি পড়তে অনুরোধ জানাব। ভুলভ্রান্তি ও সংশোধন নিয়ে যেকোনো মতামত সানন্দে গৃহীত হবে এবং পরবর্তী সংস্করণে শোধন করার প্রতিশ্রুতি থাকবে। ইতিহাসের উষালগ্ন হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত সংগীতের বিবর্তন, চর্চা ও অনুশীলনের কথা বইতে বলা হয়েছে। আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলিম, আধুনিক সামাজিক প্রয়োজন নিয়ে বর্ণনা রয়েছে। অনেক গানের বিবরণ, তালিকা আকারে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বইটিতে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, মূল্যবান এসব গান কেউ যদি পুরোপুরি শুনতে চান, এ নিয়ে চর্চা করতে চান, তবে তা রেফারেন্স হিসেবে সহায়ক হবে। প্রয়োজনে এসব গান ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। চিরসবুজ কিছু গানের সম্পূর্ণ গীতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে (তৃতীয় খণ্ডে)। শ্রোতা বা সংগীতশিল্পী অনেক সময়েই পুরো গান মনে রাখতে পারেন না। পুরো গান থাকলে রাগভিত্তিক নোটেশনের সহায়ক ও যাচাই হয়ে থাকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ১৯৪০-১৯৭০ সাল পর্যন্ত হিন্দি ছায়াছবির চিরসবুজ লঘু সংগীতের উল্লেখযোগ্য কোনো গানই বাদ পড়েনি লেখায়। বই রচনায় যাঁদের লেখা বা চলমান তথ্যপ্রযুক্তি সহায়ক হয়েছে, বইয়ের শেষে তা দেখানো হয়েছে। তাঁদের অথবা তাঁদের শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি এ জন্য লেখকের কৃতজ্ঞতা রইল। বইটি একসঙ্গে প্রকাশ করতে গেলে বেশ বড় হবে বিবেচনা করে একে তিন খণ্ড করা হয়েছে। এগুলো হলো ভারত-বাংলাদেশ চিরসবুজ গানের উন্মেষ, ব্যাপ্তি ও সৌকর্য। দ্বিতীয় খণ্ডটি লেখা চলছে। এতে থাকছে বাংলা ও হিন্দু¯’ানি চিরসবুজ গানে বাঙালি সংগীতজ্ঞদের অবদান। বিশেষ করে, হেমন্ত, শচিন দেব বর্মন, অনিল , সলিল চৌধুরী, মান্না দে, কিশোর কুমার, নীতিন বোস, বিমল রায় এবং অন্যদের ওপর আলোচনা, তাঁদের কৃতিত্বের বিবরণ। তৃতীয় খণ্ডটিতে থাকবে হিন্দি ছায়াছবির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ লঘু গান নিয়ে ১৯৪০ হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বর্ণযুগের উল্লেখযোগ্য সকল ইতিবৃত্ত ও গানের বিবরণ।
Title
ভারত-বাংলাদেশ চিরসবুজ গানের উন্মেষ ব্যাপ্তি ও সৌকর্য