ফ্ল্যাপে লেখা কথা বাংলাদেশের উত্তর জনপদের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ে লেখা আজ থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত উপন্যাস ‘মহুয়ার দেশে’ । প্রয়াত লেখক ও চিকিৎসক ডা: তাসাদ্দুক হোসেন এই উপন্যাসটির রচয়িতদা।সম্ভবত বাংলা ভাষায় এদেশে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর উপর রচতি এই উপন্যাসটিই প্রথম। এর আগে আর কোনো ঔপন্যাসিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিয়ে কোন উপন্যাস লিখেছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। এই উপন্যাসে সাঁওতাল সমাজের আবহমান দৃশ্যে চিত্রের পাশাপাশি দুই মানব-মানবীর চিরন্তন প্রেম এবং এই প্রেমকে ঘিরে নানা ঘটনাবলী তথা সমাজিক দ্বন্দ্ব সয়ঘাত রূপায়িত হয়েছে। আর বিরহের মধ্য দিয়ে নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা গ্রহণের অজানা গন্তব্যের এর করুন পরিণতি ঘটেছে। এই উপন্যাসের চরিত্ররা নিতান্তই খেটে খাওয়াদিন-মজুর,চাষা-ভুষা এবং হতদরিদ্র । ফলে ধনিক শ্রেণী পরিচালিত সমাজের শাসন-ত্রাসনে মানুষের চলাফেরায় ও কথা বলায় ও যে স্বাধীনতা থাকে না সেই কঠিন বাস্তবতা সর্বহারা শ্রেণীর নর-নারীর প্রেমের মাঝেও এক সময় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় এবং জমিদারের পত্তনকৃত প্রজাকে তার ভূস্বামীর অন্যায় আদেশ মেনে নিতে বাধ্য হতে হয়। অন্যথায় তাকে নজি ভিটেমাটি হতে হবে উচ্ছেদ। প্রায় ছয় দশক আগে রচিত সাঁওতাল জনজাতির দুই তরুন-তরুনীর আবহমান প্রেম কাহিনীর মধ্যে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের যে জীবন চিত্র তখা প্রাকৃতিক পরিশে,সমাজ ব্যবস্থা , মানুষের আচার -আচরণ, কৃষ্টি -সংস্কৃতি, প্রথা ইত্যাদি নৃতাত্ত্বিক কাব্যিক গল্পচ্ছলে তুলে এনেছেন ঔপন্যাসিক । বিগত পাঁচ দশকে সাঁওতাল সমাজে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, উন্নত জীবনের আশায় অনেকেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মন্তরিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের দারিদ্র্য হতে মুক্তি যেমন ঘটেনি-তেমনি এখনো দৃশ্যমান ও বিদ্যমান মানব-মানবীর প্রেম, স্নেহ-মমতা,চিরচেনা চিরন্তন আবহমান চিত্র।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।