একটি জাতির জন্ম ও অন্যান্য এই বইটির প্রুফ দেখতে গিয়ে পুরো বইটিই পড়া হয়েছে আমার। পড়তে পড়তে ব্যক্তি জীবনে জিয়াউর রহমানের পর্বের একটা জায়গায় গিয়ে আমি বিষ্মিত হয়েছি যে, তিনি এতো সাদামাটা খাবার-দাবার ও জীবনযাপন করতেন যে, প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ওনার বাসায় এক আইটেমের তরকারি ও ডাল রান্না হতো। যার রাষ্ট্রীয় কার্যালয়ে ও তাঁর বাসায় বিশেষ ভিআইপি গেষ্টদের জন্যও সেম রান্নার আয়োজন করা হতো। এজন্য অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহযেই তাঁর আমন্ত্রিত অতিথি হতে চাইতেন না। তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কোনো আত্মীয় স্বজনদের তিনি ঢাকায় আসতে অনউৎসাহিত করতেন, কেহ কোনো ধরনের তদবির নিয়ে তার কাছে আসতেন না। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান, স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের মতো এতো নিরহংকার ও দেশপ্রেমিক একজন মানুষকে গত ১৭-১৮ বছর ধরে পাঠ্যপুস্তক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতা থেকে অন্ধকারে রেখে দিতে চেয়েছিলেন স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী সরকার। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই আলোকবর্তিকা মানুষটির জীবন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে আমার এই গবেষণাধর্মী জীবনী বইটি রচিত করেছি। বইটি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে জানতে বুঝতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জনগনের উপর হামলা করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার নিয়োগ করা হয় যে ব্রিগেডের সদস্যরা তারই অধীনে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। '৭২ এর জুন মাসে তিনি কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ (উপসেনাপ্রধান) নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে, ঐ বছরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল করেন এবং নিজেও লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবী গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন।