বিমান বলল, “তা হলে আমরা কালই যাচ্ছি তো?” স্বপন একটু আমতা আমতা করে বলল, “কালই? কেন, আর দু-একদিন দেরি করলে হয় না?” বিমান বলল, নেই !” “আর দেরি করে কী হবে? কাল তো আমাদের কিছুই করবার স্বপন বলল, “সাত তারিখে প্রিয়ব্রতদা এসে যাবেন। তার মানে আর তিনদিন বাদে!” “প্রিয়দা এলে কী হবে? প্রিয়দা দারুণ কুঁড়ে, তুই জানিস না! কোথাও যেতে চাইবে না, আমাদেরও যেতে দেবে না!” “প্রিয়দা কুঁড়ে? পুলিশের লোক কখনও কুঁড়ে হয় ?” বিমান হাসল। যেন স্বপন একটা বাচ্চা ছেলে, কিছুই জানে না। হাসতে হাসতে বিমান বলল, “তুই তো প্রিয়দাকে আমার চেয়ে বেশি চিনিস না ! কোনও রহস্য কিংবা খুন-টুন থাকলে প্রিয়দা খুব ছোটাছুটি করে বটে, কিন্তু অন্য সময় পড়ে পড়ে ঘুমোয়। বেড়াতে ভালবাসে না, কোনও নতুন জায়গায় যেতে চায় না। চল, আমরা কালই বেরিয়ে পড়ি।” স্বপন বলল, “বড্ড দূর! একদিনে কি পৌঁছোতে পারব ?” বিমান বলল, “কত আর দূর হবে? জায়গাটা এখান থেকে চোখে দেখা যায়—' “তুই জানিস না বিমান, পাহাড়ি জায়গায় খালি চোখে দূরত্ব বোঝা যায় না। যে-পাহাড়কে মনে হয় খুব কাছে, আসলে সেটা অনেক দূর। পড়িসনি, সঞ্জীবচন্দ্র লিখেছেন—” “সঞ্জীবচন্দ্র একথা লেখার ফলে কী হয়েছে জানিস তো? যে-পাহাড়টা আসলে খুব কাছে, সেটাও বাঙালিরা মনে করে খুব দূরে। এই তো লাট্টু পাহাড়টা আমি এখান থেকে খালি চোখে দেখতে পাচ্ছি, তা বলে কি এটা অনেক দূর? মাত্র দেড় মাইল তো— " “দেড় মাইল না, অন্তত আড়াই মাইল।’ “তুই মেপেছিস?” “তুই মেপেছিস?”
Title
হলদে বাড়ির রহস্য ও দিনে ডাকাতি (২টি রহস্য উপন্যাস একত্রে)
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।