চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতর রচনা এটি। ১ খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় মন্তব্য করেছেন, “যত গূহ্য অধ্যাত্মসাধনার গূহ্যতর তত্ত্বই ইহাদের মধ্যে নিহিত থাকুক না কেন, স্থানে স্থানে এমন পদ দু’চারটি আছে যাহার ধ্বনি, ব্যঞ্জনা ও চিত্রগৌরব এক মুহূর্তে মন ও কল্পনাকে অধিকার করে। অথচ, এ-কথাও সত্য যে, সাহিত্যসৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই গীতগুলি রচিত হয় নাই, হইয়াছিল বৌদ্ধ সহজসাধনার গূঢ় ইঙ্গিত ও তদনুযায়ী জীবনাচরণের (চর্যার) আনন্দকে ব্যক্ত করিবার জন্য। সহজ সাধনার এই গীতিগুলি কর্তৃক প্রবর্তিত খাতেই পরবর্তীকালের বৈষ্ণব সহজিয়া গান, বৈষ্ণব ও শাক্ত-পদাবলী, আউল-বাউল-মারফতী-মুর্শিদা গানের প্রবাহ বহিয়া চলিয়াছে।” ২ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।