মৃত্যুর পরেও মানুষ তার রাজনৈতিক অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বা পরিচয় বহন করে অথবা ভুলতে চায় না। সম্পর্কের বহু মাত্রায় বহু রূপে তার প্রকাশ ঘটে। ক্ষমতা, হৃদয়বৃত্তি, স্মৃতিময় আকুলতার গভীরতর প্রকাশ থাকে সমাধিলিপি তথা সমাধিপদ্যে। অন্যদিকে এগুলো দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা ও বীক্ষণের সারাৎসার - অবসানের বিপরীতে রচিত জীবনযাপনের বয়ান। বর্তমান বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছয়টি প্রবন্ধ: ‘স্মৃতি ও সংরক্ষণ’, ‘এপিটাফ নামের কবিতা’, ‘কবিদের সমাধিফলক’, ‘দাঁড়াও পথিকবর!’, ‘পারিবারিক স্মরণ’, ‘সামাজিক স্মরণ’ ও ‘মৃত্যু, মৃত্যুর অধিক’। আশা করি পাঠক এই ক্রমে বইয়ের কেন্দ্রীয় চিন্তার সূত্রটি ধরতে পারবেন। স্মৃতির সমাজমনস্তত্তে¡র সঙ্গে ধর্মের যোগসূত্র অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই পরম্পরা যেমন মান্য, তেমনি সৃষ্টিশীল সংবেদনশীলতার প্রাচীনতর ঐতিহ্যও অস্বীকার করা যায় না। স্মরণের পরম্পরায় জন্ম হয় নতুন ধারার কবিতা; এতে কবিরা সরাসরি যুক্ত হন অথবা সমাজই লিখিয়ে নেয় কবিতা বা সমাধিপদ্য। সমাজের সঙ্গে তাই মৃতের আন্তঃযোগাযোগ ছিন্ন হয় না। কবরস্থান কেবল ঘুমের রূপকার্থ তৈরি করে না, সামাজিক প্রয়োজনেই তৈরি হয় পথ, আবির্ভাব ঘটে পথিকের এবং এরাই মৃতের জাগ্রত উত্তরসূরি। এভাবে জন্ম হয় বীরকথা; জাতীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তার মতাদর্শের স্মরণ ও পরম্পরা। তবে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রবণতাটি ভিন্নতর, একান্তই আত্মস্থ বা অনুভ‚তি প্রকাশের ব্যাপার। এসব ক্ষেত্রে কথা বা কবিতার শব্দে-ধ্বনিতে ক্ষরণ অস্পষ্ট থাকে না, অথচ তা নীরব ও স্তব্ধ; অন্যদিকে চেতনাস্রোত থাকে কল্লোলিত। এই স্তব্ধ অস্তিত্বই একাধারে ধারণ করে জীবন ও মৃত্যুর জায়মান রূপ।
জন্ম ১৫ অক্টোবর ১৯৬৮; কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারে। পিতা : মোহাম্মদ হোসেন; মাতা : আমেনা খাতুন। শিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষা দেবিদ্বার উপজেলার মডেল ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের অধ্যয়ন। উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা সাহিত্য বিষয়ে বিএ অনার্স (১৯৯১) ও এমএ (১৯৯২)। উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প : জীবনজিজ্ঞাসা ও শৈলী-বিচার’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি লাভ (২০০৫)। কর্মজীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান, বর্তমানে অধ্যাপক পদে কর্মরত।