‘আমানতদারিতা’ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এটি আল্লাহ ও বান্দার যাবতীয় হক ও দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সাথে পালন করার নাম। আমানতদারিতা পরিশীলিত জীবনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এটি ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে সব অনুপম গুণের কারণে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব, আমানতদারিতা সেগুলির অন্যতম। আমানতদারিতার সম্পর্ক শুধু আর্থিক লেনদেনের সাথে নয়। বরং এর সম্পর্ক হ’ল ইসলামী শরী‘আতের সকল প্রকার বিধি-নিষেধ পালনের মাধ্যমে সার্বিক জীবনে নিখাদ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার সাথে। আমানতদারিতার সোপান বেয়ে বান্দা পূর্ণ ঈমানের সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হ’তে পারে। আমানতদারিতা রক্ষার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় মানবতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি আদর্শ সমাজ। আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারায় সিক্ত এক শান্তিময় জীবন। ন্যায় ও ইনছাফের আলোয় ভরা এক অনন্য জগত। পরিশেষে ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন’ গবেষণা বিভাগ এবং এর সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ তাদেরকে স্ব স্ব ইখলাছ অনুযায়ী উত্তম জাযা দান করুন! সেই সাথে দীন লেখক ও তার মরহূম পিতা-মাতা, সৎকর্মশীল পরিবারবর্গ ও সন্তান-সন্ততিদের জন্য অত্র লেখনী পরকালীন নাজাতের অসীলা হৌক, এই প্রার্থনা করছি- আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।