নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধানে বেরিয়েছেন স্যার হেনরি কার্টিস। সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন রয়েল নেভির ক্যাপ্টেন জন গুড আর বিখ্যাত শিকারি অ্যালেন কোয়াটারমেইন। পথের দিশা বলতে তিনশ বছর আগের একটা চিরকুট: ‘আমি, হোসে ডা সিলভা, এই মুহূর্তে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃত্যুর মুখোমুখি ছোট্ট একটা গুহার ভেতর। যে দুই পাহাড়ের আমি নাম দিয়েছি ‘শেবার বক্ষযুগল’,’ ওগুলোর সর্বদক্ষিণের উত্তর পাশে রয়েছে গুহাটা, যেখানে নেই কোনো তুষারের অস্তিত্ব। ভাঙা একটা হাড়কে কলম আর নিজের রক্তকে কালি বানিয়ে খ্রিষ্টিয় ১৫৯০ অব্দে লিখে যাচ্ছি এই চিঠি, আমার পোশাকের কাপড়ের ওপরে। যদি আমার ভৃত্য আমাকে এসে খুঁজে পায়, তবে এই চিঠিটা যেন ডেলাগুয়ায় আমার বন্ধুর (নামটা অস্পষ্ট) কাছে পাঠায়, পুরো বিষয়টা রাজাকে অবহিত করার জন্য। রাজা যদি এখানে সৈন্য প্রেরণ করেন, আর তারা যদি মরুভূমি এবং পাহাড় পেরোনোর পাশাপাশি দুর্ধর্ষ কুকুয়ানা এবং তাদের কালো যাদুকে পরাস্ত করতে পারে, যার জন্য অবশ্যই একদল যাজককে সাথে আনতে হবে, তবে রাজা হবেন কিং সলোমনের পরে সবচেয়ে ধনাঢ্য রাজা। আমি স্বচক্ষে সলোমনের গুপ্তধনের চেম্বারে অগুনতি হীরা জমাকৃত অবস্থায় দেখেছি, যার অবস্থান ধবল মৃত্যুর পেছনে; যদিও জাদুকর গাগুলের কারণে স্রেফ নিজের জীবনটা ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি সাথে। যে বা যারা এখানে আসবে, তাদের আসতে হবে ম্যাপে দেখানো পথ অনুসরণ করে। তুষার অনুসরণ করে শেবার বাম বক্ষের শীর্ষ বিন্দুর ওপর দিয়ে আসতে হবে উত্তর পাশে, যেখানে বিশাল রাস্তা তৈরি করে রেখেছেন সলোমন। আর সেখান থেকে রাজপ্রাসাদের দূরত্ব তিনদিনের পথ। যে আসবে তাকে অবশ্যই খুন করতে হবে গাগুলকে। আমার আত্মার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। বিদায়।... পদে পদে ভয়, রোমাঞ্চ আর মৃত্যুর হাতছানি। স্বাগত ৮টি কালার ইলাস্ট্রেশন, ৫০ সাদাকালো ইলাস্ট্রেশনসহ বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদে স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের কালজয়ী উপন্যাস “কিং সলোমন’স মাইনস”-এর রোমাঞ্চকর অভিযানে।
ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী লেখা শুরু করার পর যিনি শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর গল্পের স্রষ্টা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি হলেন স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড। কম বয়সে চাকরিসূত্রে তিনি আফ্রিকা চলে যান এবং সে অঞ্চলের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, যার ফলে আফ্রিকা মহাদেশের নানা জানা-অজানা বিষয় সম্পর্কে তিনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে ব্যবহার করেন তার রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস ও গল্পসমূহ রচনায়। দশ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৬ সালের ২২ জুন, ইংল্যান্ডের নরফোকে। খুব অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু হয়ে যায় পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। মাত্র উনিশ বছর বয়সেই তাঁকে চাকরিসূত্রে পাড়ি জমাতে হয় আফ্রিকায়। সেখান থেকে ৬ বছর পর ফিরে এসে তিনি আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শুরুর পাশাপাশি সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর জাদুকরী লেখনীর মাধ্যমে সৃষ্টি হতে থাকে 'সলোমন'স মাইনস্', 'শী', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন' এর মতো অমর সকল দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর কাহিনীর। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমূহ যুগে যুগে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পাঠকদের দিয়ে গিয়েছে নানা বিচিত্র কল্পকাহিনীর এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যার মূলে রয়েছে 'আমস্লোপোগাস', 'রিলিজিয়ন', 'অ্যালান কোয়াটারমেইন', 'শী' ইত্যাদি বিখ্যাত সিরিজ। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ক্লিওপেট্রা', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'লিসবেথ', 'কুইন অফ দ্য ডন', 'ভার্জিন অফ দ্য সান', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'মেরি', 'দ্য ট্রেজার অফ দ্য লেক', 'রেড ইভ' ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। তাঁর বেশ কিছু বই বাংলাদেশি পাঠকদের সুবিধার জন্য অনূদিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায় অনূদিত হেনরি রাইডার হ্যগার্ড এর অনুবাদ বই এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'শী', 'রিটার্ন অফ শী', 'দ্য ইয়েলো গড', 'দ্য ঘোস্ট কিংস', 'কিং সলোমন'স মাইনস', 'মন্টেজুমা'স ডটার', 'অ্যালান অ্যান্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার', 'মার্গারেট', 'দ্য পিপল অফ দ্য মিস্ট' ইত্যাদি। এই খ্যাতিমান কাহিনীকার ১৯২৫ সালের ১৪ মে ৬৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯১২ সালে ইংরেজ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে 'নাইটহুড' উপাধি লাভ করেন।