ইমামের বেতন বৈষম্য দূর করে মসজিদগুলো সংস্কার হবে কবে? পণ্যদ্রব্যের ঝাঁজালো মূল্যের বাজারে পঁচিশ-ত্রিশ হাজার টাকা মাইনে পাওয়া পরিবারে এখন নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। হিসেবের খাতা বড্ডবেশি এলোমেলো। সেই একই দামের সদাই কিনে কীভাবে সংসার চালায় চার পাঁচ হাজার টাকা মাইনে পাওয়া মসজিদের ইমাম? জনগণের টাকা সরকার ঐ সকল খাতেই ব্যয় করে, যা জনগণের প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুপাতে বাজেট আবার কম বেশি হয়। স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পার হলেও মসজিদ ও ইমাম এখনো বাংলাদেশের মুসলমানদের সেই প্রয়োজন হয়ে উঠতে পারেনি কেন? প্রতি ওয়াক্তে ১ টাকা জমা দিলে প্রতিদিন জমা হয় ৫টাকা, মাসে ১৫০ টাকা। বছরে জমা হয় ১৮০০ টাকা। এমন ১০০ জন মুসলমান যদি মসজিদে টাকা জমা দেয় তাহলে বছরে টাকা উঠবে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। এতে ইমাম সাহেবকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়া সম্ভব। মসজিদ কেন্দ্রীক বাংলাদেশে কি এমন সমাজও আছে যেখানে মাসে ১৫০ টাকা করে দেওয়ার মতো ১০০ মুসলমানও নেই? এই তো শীত এলো বলে! এক দিনের জন্য দু'তিন লক্ষ টাকা দিয়ে মাহফিল আয়োজন করবে যুব সমাজ। সেই যুব সমাজই কেন পুরো এক বছরের জন্য সম্মানজনক বেতন দিয়ে মসজিদের জন্য একজন ইমাম রাখতে পারবে না? বর্তমান যুব সমাজ যুগ সচেতন। হুজুরদের বেতন বোনাস, সুযোগ সুবিধা বিষয়ে কৌতুহলোদ্দীপক। তবে বেশ দূরে থেকে। নিজেদের সামনে হেয়ালি মসজিদ কমিটির জুজু আর মরিচিকার প্রাচির দাঁড় করিয়ে। ফলে মসজিদ পরিচালনায়, সংকট নিরসনে তাদের আধুনিক চিন্তাভাবনাগুলো অংকুরিত হয়ে অযত্নে অবহেলায় আবার মাটির সাথে মিশে যায়। মসজিদের প্রতি কল্যাণকামী সে সব যুবকের সাহস সঞ্চারক 'হুজুরনামা'। মসজিদের সার্বিক বিষয়ে যেন তারা 'নাক গলায়।' মসজিদ কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা প্রত্যেক সমাজের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয়। ভিন্ন হয় ঐ সমাজের সংকট সমাধান। নিজ সমাজের সংকট নিরসনে এগিয়ে আসা একজন অসহায় ইমাম সাহেবের গল্প 'হুজুরনামা।' মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব মানুষের হাতে। কেউ যদি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট না হয় তবে আল্লাহ তায়ালাও তার ভাগ্য পরিবর্তনে রহমত নাযিল করেন না। একজন ছাত্রের কর্মজীবনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছাত্রজীবন। ভাগ্য পরিবর্তনে তাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রকেই বেছে নিতে হয়। প্রাত্যহিক পড়াশোনার সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। ছাত্রজীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে অযথা নষ্ট না করে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর প্রেরণা দেয় 'হুজুরনামা।'
শাহাদাত হুসাইন। একজন তরুন উদিয়মান লেখক। ১৯৯৪ সালের ৭ই ডিসেম্বর লক্ষীপুর জেলার বশিকপুর গ্রামে তার জন্ম। দু বোন আর দু ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। প্রাথমিক পড়া শুরু করে দত্তপাড়া কিন্টার গার্ডেন কেজি স্কুলে। আর কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্মন্ন করে ২০১৮ সালে। বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে। বইয়ের প্রতি ছোট সময় থেকে তার ভালোবাসা। বড় বোন ছিলো বইয়ের পোকা। কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন উপন্যাস নিয়ে পড়ে থাকতো। ফাঁকে ফাঁকে ছোটদের দু একটা বই কিনে দিতো তাকে। কিনে দিয়েই তার কাজ শেষ হতো না, স্কুলের পরীক্ষার মত চলাতো তার উপর পরীক্ষা। বল, কী বুঝলি এ বই থেকে? কোন চরিত্র তোর কাছে ভালো লেগেছে? কোন জায়গাটা ভালো লাগলো? তাই অল্প বয়সেই তার পড়া হয়ে গেছে, নামি, বেনামি অনেক লেখকেরই বই। বই পড়ার অভ্যেস ছোট সময় হলেও লেখার অভ্যেসটা হয় অনেক পরে। তার প্রধান সখ হলো ডায়রি লেখা। এমন কোন বিষয় নেই যা সে ডায়রিতে লেখে না। প্রতিদিন সে লেখে। তার সহপাঠিরা যখন ফেসবুকে পোস্ট দিতে ব্যস্ত তখন সে ডায়রির পাতায় মনের মাধুরি মিশিয়ে মনের কথা লিখে রাখতে ব্যস্ত। কেউ তার লেখা পড়লে তার লজ্জা করতো। ভীষন ভাবে লজ্জিত হতো। কারণ একটা শব্দ লিখলে তার ভুল হতো দুটো। তারপরও লিখে যেতো। দীর্ঘ একটা সময় পর নিজের মনের ভেতর সে একটা রাজ্য গড়ে তুলেছে। যে রাজ্যটা কেবলই তার। সেখানে কেউ তার ভুল ধরে না। কেউ তার লেখা নিয়ে হাসে না। সেখানে কখনো সে প্রেমীক হয়, কখনো বাউন্ডুলে হয় কখনো সংগ্রামী হয়। নিজের মনের কথাগুলো ডাইরির পাতায় লিখতে থাকে সাবলীল ভাবে। বর্তমানে আট থেকে নয়টি ডায়রির মালিক। যে ডায়রিগুলোকে সে বন্ধু বলে ডাকে। তিন বছর আগেও একান্ত ঘনিষ্ট বন্ধু ছাড়া কেউ তার লেখা পড়েনি। তাই নিজেই ছিলো লেখক। আবার নিজেই সমালোচক। সর্বপ্রথম ডায়রির গন্ডি পেরিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালিকায় তার লেখা দেওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরুতেও লেগেছে বেশ কিছুটা সময়। ২০১৮ সালে ইসালামি অনলাইন পত্রিকা, আওর ইসলাম. কম এ নবিজীকে চিঠি লিখে জিতে নাও পুরষ্কার এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। এবং দশ হাজার টাকার বই পুরষ্কার পায়। গল্পের প্রতি তার মোহ বেশি। তার মনের প্রধান আকর্ষণ। সে হিসেবে বিমল মিত্র, শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার প্রিয় লেখক। লজ্জাহর গল্পে বিমল মিত্রের প্রতি ভালোবাসা, আর মেঝ দিদি পড়ে শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মে। সামগ্রিক বিবেচনায় আবু তাহের মেসবাহ, আহমদ মায়মূন, নাসিম আরাফাত, যায়নুল আবেদীন, শরীফ মুহাম্মাদ, হুমায়ুন আহমেদ, বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায় তার প্রিয় লেখক। বড় হয়ে আসলেও সে কিছু হতে পারবে কিনা সে তো ভবিষ্যত বলবে, তবে তার প্রবল ইচ্ছা এ এক জীবনে সে লড়ে যাবে। সে যুদ্ধ করবে। অবিরাম, প্রতিনিয়ত। কিছু স্বপ্নের জন্য। কিছু ভালোবাসার জন্য।