কবি মানেই কী বোহেমিয়ান? আমার মনে হয় কবি অন্য দশজনের চেয়েও নিগূঢ়ভাবে জীবনের সাথে লেপ্টে থাকে। জীবনের প্রাণরস আস্বাদন করে। বোধের সড়কে দাঁড়িয়ে দেখে কবি দেখেন সমাজের অনিয়ম, বিচ্যুতি ও বৈষম্য। কবি রফিকুল নাজিম এর কবিতাগুলো পড়ে মনে হয়- সে আমাদের ঘরের ছেলে। আর তাঁর কবিতার পঙক্তিগুলো হলো আমাদের অন্দরমহলের আলাপচারিতা। অথবা বুকের গোপন। কবি যখন তাঁর বইয়ের প্রথম পঙক্তিই শুরু করেন এইভাবে, 'যদি হাসির ময়নাতদন্ত হয়?' এই এক পঙক্তিই পড়ে আপনাকে থামতে হবে। সত্যিই তো- যদি আমাদের হাসির পোস্টমর্টেম হয়, নির্ঘাত ধরা পড়বে আমাদের মিথ্যার বেসাতি। ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হবে আমাদের সুখাভিনয়ের মৃৎশিল্প! সত্যিই তো- সব ভোগাস। কবি কতো সহজে আমাদের মনের কথাগুলো অবলীলায় বলেছেন তাঁর 'হাসির ময়নাতদন্ত' কাব্যগ্রন্থে। রফিকুল নাজিম মেদবহুল কবিতা লিখতে পছন্দ করেন না। কবিতাকে পার্লারে যেতে দেন না। রফিকুল নাজিমের কবিতা পড়লেই চেনা যায়। মিতব্যয়ী কবি কবিতাকে প্রয়োজনের অধিক অলংকারে আবৃত করেন না। যেমন- 'কলস যদি যায় গো ভেঙে- করে টানাটানি/ পাড়ার লোকে কলঙ্ক দেয়- করে কানাকানি?/ তখন তুমি পারবে কী আর দেখাতে নিজ মুখটা/ আয়না হবে টাঙ্গুয়ার জল নোনা ভেজা চোখটা।' আবার কবি লিখেছেন- 'মানুষ মরলে মানুষ শোক করে/ আত্মার শান্তি কামনা করে,/ কই- কথার মৃত্যুতে তো কেউ 'ইন্না লিল্লাহ' পড়ে না!' মানুষের বুকের চার দেয়ালে কতো কথা মাথা ঠুকে মরে। গোপনে। আড়ালে। এমন চারু পঙক্তির বিন্যাসে লিখেছেন কবিতাগুলো। কবি রফিকুল নাজিম উচ্চমার্গীয় কাব্য ভাষা পরিহার করে সাধারণের ভাষায় কথা বলেছেন কবিতায়। 'হাসির ময়নাতদন্ত' পড়ে পাঠক নিজেকেই প্রতিস্থাপিত করবেন কবির জায়গায়। এটাই কবি রফিকুল নাজিমের অর্জন। প্রেয়সীকে কবি 'দুর্বোধ্য শিলালিপি'র সাথে হিসেবে দেখিয়েছেন- একদিন তোমাকে সুখপাঠ্য মনে হয়েছিল আমার মনে হয়েছিল তুমি খুবই সহজবোধ্য আনন্দপাঠ, তোমার চোখমুখ ঠোঁট দেখে মনে হয়েছিল তুমি বাল্যশিক্ষা আদর্শলিপির অ আ ক খ এর মত প্রাথমিক প্রাথমিক ব্যাপার! 'মানুষ এক পরিযায়ী পাখির নাম' কবিতায় কবি লিখেছেন- শীতে যেমন এখানে পাখিরা আসে- ফাগুনে চলে যায় মানুষ এক পরিযায়ী পাখির নাম; মনে রাখা কার দায়!