‘তোত্তো-চান’ বইটির ইংরেজি অনুবাদ আমি প্রথম পড়ি বছর আটেক আগে। এবং বলা বাহুল্য, মুগ্ধ হই। সেই থেকে বইটি বাংলায় অনুবাদ করতে চাইছি আমি। মূল জাপানী ভাষা থেকে ‘তোত্তো-চান’-এর একটি বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে। সংগ্রহ করতে চেয়ে সেটি আমি পাইনি; বাংলা একাডেমীর অফিস থেকেই বলা হয় যে বইটি ড়ঁঃ ড়ভ ঢ়ৎরহঃ। অথচ, একবার বইটির বাংলা অনুবাদের অনুমতি দেওয়া হয়ে গিয়েছিলো বলে দ্বিতীয়বার তা পেতে অনেক সময় লেগে যায়। আমি ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, বিশেষ করে অরুণ চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞ আমাকে 'তোত্তো-চান' অনুবাদের দায়িত্ব দেবার জন্য। এই বইটির সঙ্গে আমার পরিচয় করানোর পেছনে দুজন শিক্ষাবিদের ভূমিকা রয়েছে-দিল্লির অরবিন্দ গুপ্তা এবং কলকাতার মেরি অ্যান দাশগুপ্ত। গত আট বছর ধরে ওঁরা আমার পাশে না থাকলে আমি এই অনুবাদ সম্পন্ন করতে পারতাম না। শেষে বলি, এমন অসাধারণ একটি বই অনুবাদ করতে পেরে আমি ধন্য হয়ে গেছি। আমি জাপানী ভাষা জানি না। হয়তো মূল বইটির সঙ্গে আমার অনুবাদের বিস্তর দূরত্ব রয়ে গেলো। তবু ডরথি ব্রিটনের ইংরেজি অনুবাদটি যেহেতু তেৎসুকো কুরোয়ানাগির খুব ভালো লেগেছিলো, আমি সেই ইংরেজি অনুবাদের যতটা কাছাকাছি থাকা যায়, তারই চেষ্টা করেছি।
তেসুকো কুরােয়ানাগির জন্ম টোকিওতে, ১৯৩৩ সালে। তিনি টোকিও সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে অপেরা সঙ্গীত বিষয়ে লেখাপড়া করেন ও তালিম নেন। কিন্তু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন একজন গুণী অভিনয়শিল্পী এবং রেডিও টেলিভিশনের অতি জনপ্রিয় উপস্থাপক। দর্শকদের ভােটে পরপর টানা পাঁচ বছর তিনি জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মনােনীত হন। খুব দ্রুতই তাঁর থলেতে জমা হতে থাকে সমানজনক নানা পুরস্কার। ১৯৭৫ সাল থেকে জাপানের ইতিহাসের প্রথম দৈনিক টকশাে উপস্থাপনা করতে শুরু করেন, যার নাম ছিল ‘তেৎসুকোর ঘর’। তার প্রায় সকল অনুষ্ঠানই দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। জাপান ও পৃথিবীর কল্যাণ নিয়ে সত্যি সত্যি চিন্তা ও সাধ্যমতাে কাজ করেন। তিনি লেখক তেৎসুকো কুরােয়ানাগির জীবন ও কর্ম দেখে বােঝা যায় রেলগাড়ি ইশকুলের প্রধানশিক্ষক মশাই নিজ হাতে কত সুন্দর একটি গাছের চারা রােপণ করে গেছেন, যা এখন ফুলে ফুলে শােভিত।