অধ্যাপক মজিবর রহমান-এর সঙ্গে কথা না বললে, কাছে না আসলে অথবা তাঁকে সঠিক মাত্রায় উপলব্ধি না করলে বুঝা যাবে না, তিনি কত বড়মাপের একজন মানুষ। তাঁকে বাইরে থেকে দেখে, সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অথবা দেশ, মানুষ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে তাঁর চিন্তা এবং বর্তমানে তাঁর দার্শনিক উক্তি, ক্ষোভ, ঘৃণা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে এনে আমরা তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছি। কখনো কখনো তার অভিব্যক্তিকে উন্মাদের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছি। তার দুঃখ কী, ক্ষোভ কী, যন্ত্রণা কী- তা উপলব্ধির চেষ্টা করি নি। অনেক দেরি হলেও এই কিছুদিন আগে গভীর মনোযোগে তাঁর অন্তরের কান্না শোনার চেষ্টা করেছি, উপলব্ধি করেছি আমরা। অনেক পরে হলেও যখন উপলব্ধি করতে পেরেছি গভীর মনযোগে কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। তাঁর ভেতরটা জানার চেষ্টা করে আমরা বুঝেছি এবং আমরা বলব, তিনি একজন মহামানব, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তিযোদ্ধা, একজন খাঁটি বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে পাকবাহিনীর মুখের ওপর তিনি বলেছিলেন, 'পাকবাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদস্বরূপ আমি আমার নাম পরিবর্তন করে বাঙালি নাম 'দেবদাস' রাখলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় চতুর ত্যাগ করলাম'। কতটুকু সাহস দৃঢ় মনোবল থাকলে হিংস্র হানাদারবাহিনীর প্রতি এই ঘৃণ্য প্রকাশ করা যায়। নিজের জীবনের মায়া করেননি। নিজের মুক্ত চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দেননি। বাঙালিত্ব বিসর্জন দেননি। নিজেই ধরা দিলেন পাক হানাদারবাহিনীর হাতে। যার ফলে তাঁকে ৫ মাস নাটোরে পাক হানাদারদের নির্যাতন সেলে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এখানে তাঁর চোখের কোণায় সুঁই ঢুকিয়ে শরীরে ইলেকট্রিক শক দিয়ে, অভিনব কৌশলে নির্যাতন চালিয়েও পাক হানাদারবাহিনী তাঁর কাছ থেকে কোনো তথ্য বা কথা বের করতে পারে নি। তাঁকে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি শুধু বললেন, আমি একজন বাঙালি তোমাদের আমি ঘণা করি।