‘লাইফ ইজ নট এ বেড অব রোজেজ’ অর্থাৎ ‘জীবন ফুল শয্যা নয়’। জীবন ও জীবিকার তাগিদে সাধারণ শ্রমজীবি থেকে শুরু করে কোটিপতি, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিটি মানুষকেই ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। ঘড়ির কাঁটার মতো ছক বাঁধা জীবনে মাঝে মাঝে এক ঘেঁয়েমি ভর করে, অলসতা ঝেঁকে বসে। এ একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণ দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করে। পরিবার পরিজন কিম্বা বন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে দেশ বিদেশের প্রিয় কোন গন্তব্যে ঘুরে আসলে মনোপ্রাণ ভীষণ চাঙ্গা হয়। ভ্রমণ মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধির প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ভ্রমণ ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য তার ভেতরকার সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে। চিরচেনা বৃত্তবন্দি-সদৃশ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসাটা বাস্তব দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিখিয়ে দেয় যে, সবকিছুরই একটি বিকল্প আছে। ভ্রমণ এমন একটি অবস্থা যা প্রতিটি ইন্দ্রিয়কে স্পর্শ করে। নতুন দৃশ্য আর খাবার তো আছেই; তার পাশাপাশি নতুন সুর, নতুন গন্ধ এমনকি নতুন সম্পর্ক একটি শক্তিশালী সংবেদনশীলতার জন্ম দেয়। এগুলো যেকোনো সমস্যা সমাধানের সময় নতুনভাবে ভাবনার রসদ যোগায়। অভিনব যুক্তি, বিশেষায়িত পরিকল্পনা, দ্রুত শিখে নেওয়ার প্রবণতা সব কিছু নতুন সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত করে। এক কথায় যত বেশি ভ্রমণ করা হবে, ভ্রমণকারী ততো বুদ্ধিমান হবেন। অনেকেই টাকা পয়সা হাতে নেই বলে ভ্রমণে যান না যা মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইচ্ছেশক্তি অনেক বড়। সেই ছেলেবেলা থেকেই পূর্ব পরিকল্পনা করে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে বছর শেষে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তাম। লক্কড় ঝক্কড় বাসে গন্তব্যে যাওয়া, কম দামি হোটেলে থাকা কিম্বা কম পয়সায় খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ভ্রমণের মাধ্যমেই শিখেছি। সেই অভিজ্ঞতা পরেও অনেক কাজে এসেছে, এখনও আসছে। সাংবাদিকতা পেশায় কেটে গেছে বহুদিন। পেশাদার একজন সংবাদকর্মীকে পেশাগত প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যস্ততার কারণে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকতে হয়। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা তো বটেই, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে কটুকথা শুনতে হয়। কোথায় যেন পড়েছিলাম সাংবাদিকের জন্য গভীর রাতে ঠান্ডা ভাত নিয়ে গরম (নিত্যদিন দেরিতে আসায় ক্ষুব্ধ) বউ অপেক্ষা করে। তবে ব্যস্ততার মধ্যেও সময় পেলে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। সিকি শতাব্দীর সাংবাদিকতা জীবনে কখনও রাষ্ট্রীয় খরচে আবার কখনও বা ব্যক্তিগত খরচে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করেছি। কখনও একা আবার কখনও বা পরিবার কিংবা বন্ধুরা ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন। এ যাবতকাল দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানী ও সুইজারল্যান্ড বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে মালদ্বীপ, তুরস্ক, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া ভ্রমণকালীন নানা স্মৃতি লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এ ভ্রমণকাহিনি বইটি পাঠকপ্রিয়তা পেলে ভবিষ্যতে ইউরোপসহ অন্যান্য দেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়েও বই প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে।
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল। জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব কেটেছে গ্রামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেঘনা তীরবর্তী নাছিরাবাদ গ্রামের স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে ঢাকায় ফিরেন। পুরান ঢাকার ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন। ছোটবেলা থেকে ফুটবলার হওয়ার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। কিন্তু চোখের সমস্যা কারণে হয়নি তা। বিদেশে পাড়ি জমানোর ঝোঁক থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। সাংবাদিকতায় কেটেছে পুরোপরি দুই যুগ। ১৯৯৮ সালে দৈনিক বাংলার বাণী দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু। পরবর্তীতে দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন হয়ে বর্তমানে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজ২৪ডটকম-এর প্ল্যানিং এডিটর। সাংবাদিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্ষসেরা প্রতিবেদক হয়েছেন পাঁচবার। ‘বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)’-এর শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদকের পুরস্কার জিতেছেন ছয়বার। এ ছাড়া ‘এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ) পুরস্কার’, ইউনিসেফের (১৮ ঊর্ধ্ব) ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’, যক্ষ্মা সচেতনতায় ‘ব্র্যাক শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদক’-এর পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১১ সালে নিউমোনিয়া সচেতনতা সৃষ্টিতে ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। আর খেলাপাগল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল সাংবাদিকদের অলরাউন্ড প্লেয়ার। ২৫ বছরে সাংবাদিকদের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)