মাতৃভূমি হতে বিতাড়িত-নির্বাসিত মুক্তি-পাগল এক ঝাঁক তরুন সেনা-আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মভূমি তিব্বত যখন চীনা সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত, নিষ্পেশিত, ঠিক তখনই বাংলা মায়ের করুণ আর্তনাদ শুনেছিল তারা। নিজ দেশমাতার রক্তক্ষত চিৎকারে তাদের হৃদয়ে গুমড়ে ওঠা প্রতিবাদের আগুন তখন। হৃদয়ের আগুনে ঝলসে ওঠা মারনাস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে নিঃস্বার্থ বলিদান ছিল তারাই। বিনিময়ে চায়নি কিছুই। সম্পূর্ণ শর্তহীন ছিল তাদের এই আত্মত্যাগ। নিরবে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে তারা যুদ্ধ করে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম নদি-পাহাড়-অরন্য পাড়ি দিয়ে দূর্দান্ত আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করেছিল পাকিস্তানি সেনাদের। একটা ভূতুরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল তখন সমস্ত পাহাড়ি অঞ্চলে। কিন্তু তাদের নাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তেমনভাবে স্থান পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এভাবেই অন্ধকারে ঢেকে যায়। নাম না জানা সেই বন্ধু সেনাদের অনেকগুলো রণাংগনের জীবন্ত সাক্ষী হিসাবে খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য কিছু যুদ্ধের ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই গ্রন্থটি। আপন অনুভূতির আকাশে জড়ো হওয়া দীর্ঘশ্বাসের জলবতী মেঘকণার সবটুকু মিশিয়েছি। যা বলতে চেয়েছি-যেমন করে, হয়ত তার কিছুই পারিনি, কিন্তু আমার নিখাদ ভালবাসা আর অকৃত্রিম শ্রদ্ধার পুরোটাই ঢেলে দিয়েছি এই বইয়ের প্রতিটি বর্ণসম্ভারে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম নাজু একজন মিলিটারি চিকিৎসক তিনি। আর্মি মেডিকেল কোরের হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্টের প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। সামরিক চিকিৎসক হলেও শরীর আর মনের একাক্মীকরণে বেছে নিয়েছেন বর্ণিল বর্ণসম্ভার। খাতার পাতায় নয়-বর্ণসম্ভারের খোঁজে ছোটেন আকাশের অবাধ নীলে, সবুজ পাতায়, নরম রোদের বৈকালিকী সূর্যকণায়। এভাবেই লেখক হয়ে ওঠা তাঁর। সাহিত্যের সব শাখাতেই রয়েছে একাধিক প্রকাশনা তাঁর। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। তাঁর প্রিয় সান্নিধ্য লেখালেখিকে পাশে রেখেই কাটাতে চান জীবনের প্রতিটি অনুক্ষণ।