কাফিয়া কিতাবের লেখক পরিচিতি নাম ও বংশ: কাফিয়া কিতাবের মুসান্নিফ (রহ.)-এর নাম 'ওসমান', উপনাম আবূ আমর; উপাধি জামালুদ্দীন। পিতার নাম ওমর। হাফেজ যাহরী (রহ.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর পিতা বাদশাহ ইযযুদ্দীন )عز الدين( মুসেক সিলাহীর দারোয়ান ছিলেন। আরবি ভাষায় যাকে হাজিব )حاجب( বলে। এ জন্যই তিনি ইবনে হাজিব নামে সর্বাধিক পরিচিতি। তাঁর বংশ পরস্পরা নিম্নরূপ- জামালুদ্দীন আবু আমর ওসমান ইবনে ওমর ইবনে আবুবকর ইবনে ইউনুস আদদুওয়াইলী আল-মিসরী আল-মালিকী (রহ.)। জন্মগ্রহণ: ক্ষণজন্মা এ মহা মনীষী মিসরের সাঈদ 'আলা-এর আমলে কাওসিয়ায় 'আসনা' নামক গ্রামে ৫৭০ হিজরির শেষাংশে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন: লেখক (রহ.) মিশরের রাজধানী কায়রো শহরে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। বাল্যকালেই তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ হিফজ করেন। তিনি আল্লামা শাত্বিবী (রহ.) থেকে ইলমে ক্বিরাআত আয়ত্ত করেন এবং আততাইসীর হাদীস গ্রন্থ শ্রবণ )سماع( করেন। আল্লামা আবুল জুদ (রহ.) থেকে ক্বিরাআতে সাব'আ পড়েন এবং শায়খ আবুল মানসূব শাত্বিবী (রহ.) থেকে ইলমে ফিক্স, মালিকী মাযহাবের আল্লামা শাত্বিবী (রহ.) এবং ইবনুল বান্না (রহ.) হতে সাহিত্য জ্ঞান অর্জন করেন। যোগ্যতা: আল্লামা ইবনে হাজিব একাধারে একজন সুদক্ষ ফকীহ, উচ্চামাপের তর্কবিদ, দীনদার, অত্যধিক আল্লাহভীরু, নির্ভরযোগ্য, অত্যন্ত বিনয়ী ও অকৃত্রিম লোক ছিলেন। তিনি সর্ববিষয়ে সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনে খালকান বর্ণনা করেন যে, একবার ইবনে হাজিব (রহ.) আমার নিকট সাক্ষাৎ দান প্রসঙ্গে আগমন করেন। আমি আরবি ভাষার কঠিন কঠিন খুঁটিনাটি মাসআলা জিজ্ঞেস করি; কিন্তু তিনি প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই অত্যন্ত ধীরস্থির ও মাহাত্মের সাথে প্রশান্তিমূলক ও যুক্তিসম্মত উত্তর প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, আমার প্রশ্ন হতে একটি প্রশ্ন কবিগুরু মুতানাব্বীর নিম্নোক্ত কবিতা সম্পর্কে ছিল, قالون اقحم حتى مقتحم لات مصطبر * قـ لقد تصبرت حتى এ কবিতায় لات শব্দটি حرف جار না হওয়া হত্ত্বেও مُصْطَبَرٍ ও مقتحم শব্দদ্বয়ে যেরবিশিষ্ট হলো কেন? তিনি [ইবনে হাজিব (রহ.)) নিম্নোক্ত কবিতার মাধ্যমে তার উত্তর দিলেন- جوابی دلکش و مطبوع گفتش چنان کامد ازان گفتن شگفتش তিনি উক্ত প্রশ্নের নাতিদীর্ঘ অত্যধিক উত্তম জবাব প্রদান করেন। ইলমে নাহুর বেশ কতগুলো মাসআলায় তিনি নাহুশাস্ত্র বিশারদদের সাথে মতবিরোধ করে এমন এক প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, যেগুলোর উত্তর দেওয়া পায় দুঃসাধ্য। তাঁর তীক্ষ্ণ মেধার প্রশংসা করে ইবনে খালকান (রহ.) বলেন, كان من احسن خلق الله ذهنا অর্থাৎ 'তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন। কর্মজীবন: তিনি শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে প্রায় একযুগ কালব্যাপী দামেস্কের জামে মসজিদে শিক্ষা-দীক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। অতঃপর শায়খ ইযযুদ্দীন ইবনে আব্দুস সালাম এবং তিনি মিসরে গমন করেন। সেখানে মাদরাসায়ে ফাযিলিয়্যাহর সদর নিযুক্ত হন। সবশেষে তিনি ইসকান্দারিয়ায় আগমন করেন। এখানে তিনি স্থায়ীভাবে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন, কিন্তু বেশি দিন না যেতেই তিনি খোদায়ী ফায়সালার স্বীকার হয়ে যান।