এখন থেকে চল্লিশ বছর আগে নাজির আহমেদ হজ্ব করতে এসেছিলেন। তখন তাঁর বয়স প্রায় পঁচাত্তর বছর। ছেলে আবিদ পঁচিশ বছরের। সেও বাবার সাথে হজ্বে আসে। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে একদিন কিছু সময়ের জন্য নাজির আহমেদ হারিয়ে যান। পরবর্তীকালে, নাজির আহমেদ বলতেন, হজ্বে গিয়ে আবিদ হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি তাকে খুঁজে বের করেছেন। এর কয়েক বছর পরে মনুও হজ্বে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। তাঁরও বয়স তখন প্রায় সত্তর বছর। মনুকে অবশ্য খুঁজে বের করতে হয়নি। মনুর ছেলে বেলাল তখন মক্কায়। (সে এখনও মক্কায়, জান্নাতুল মুয়াল্লা গোরস্থানে চিরনিদ্রায়)। চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করত। হাসপাতালে হজ্ব ডিউটিতে থাকায় মায়ের সাথে সে হজ্বে শরিক হতে পারেনি। এখন থেকে শত বছর আগে জন্ম নেওয়া প্রায় লেখাপড়াহীন এক গ্রাম্য বালিকা (পরবর্তীকালের বুড়ি) খুব স্মার্টলি তাঁর তাঁবুতে চলে আসেন। সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি এক কর্মী তাঁকে জিজ্ঞেস করে, চাচি আপনি কী পাস? আমার তো লেহাপড়াই নাই। পাস পামু কই। তবে আমার দিক ঠিক আছে। আমি কহনো দিক হারাই না। এটা ঠিক, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়েরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকলেও তাঁরা দিক হারান না। তা মনুই হোন বা অন্য কেউ। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাঁরা অসীম সাহস নিয়ে যাবতীয় দুর্যোগ, দুর্ভোগ, শঙ্কা মোকাবিলা করছেন। যেমনটা তাঁদের পূর্বসূরি হাজেরা, মরিয়াম, আমিনা, খাদিজা, সুমাইয়া ও জয়নাবরা করেছেন। মনুকে নিয়ে এ লেখা দুনিয়ার সকল মায়ের জন্য।