এ গ্রন্থটি হলো বিগত এক দশককাল ধরে লেখা বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধসমূহের সংকলন বিশেষ, যার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে—ভাষিক রাজনীতি ও ভাষা-পরিস্থিতি: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ। গ্রন্থটি বিভিন্ন নিবন্ধের সমন্বয়ে সংকলিত গ্রন্থ হলেও, এ গ্রন্থে মূলত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভাষা-রাজনীতি, ভাষানীতি, ভাষাপরিকল্পনা এবং ভাষিক সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সে অনুসারে এই গ্রন্থে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক লালিত ভাষারাজনৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ; এই শক্তি কর্তৃক অনুসৃত ভাষিক চিন্তাধারা প্রসূত বাংলা ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র এবং তা থেকে উদ্ভূত ভাষিক সমস্যার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে এবং তা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের শেষ অংশে বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা এবং তার বাস্তব রূপদানে সহায়ক একটি বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই গ্রন্থে বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট ২২টি ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গকে পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশিত করে সঙ্কলন করা হয়েছে। ২৪টি প্রসঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন হলেও, সমস্ত গ্রন্থটি ৪টি কেন্দ্রীয় ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত; এগুলো হলো ভাষারাজনৈতিক আদর্শের বিচ্যুতি, ভাষা-পরিস্থিতির বিপর্যয়, বিপর্যস্ত ভাষা-পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ইংরেজি ভাষা ও বিদেশি ভাষানীতির রূপরেখা। কেন্দ্রীয় ধারণাগুলো সম্মিলিতভাবে যে বার্তা দেয়, তা হলো বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ভাষারাজনৈতিক আদর্শের অবক্ষয় ঘটেছে। এই অবক্ষয়জনিত কারণে দেশের রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয়ভাষা বাংলা ভাষার গঠন, মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছে। অথচ বাংলা ভাষা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতীক এবং বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার পরিচায়ক। কাজেই বাংলা ভাষার এরূপ বিপর্যয় জাতীয় সঙ্কটের ইঙ্গিতবহ। সেজন্য বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী ভাষারাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণে একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যেনো তার সহায়তায় দেশে বাংলা ভাষাকে তার প্রাপ্য মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষাসমূহকে তাদের আপেক্ষিক মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় প্রতিষ্ঠা করা যায়।
Title
ভাষিক রাজনীতি ও বিপর্যন্ত ভাষা-পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
অধ্যাপক ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকির ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জুলাই ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলাস্থ রূপসী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে জাপানিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (২০২১-২০২৩) ও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের যুগ্ন-পরিচালক (২০২১-২০২৩) পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের বাইরেও এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি পূর্বে জাপানের টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক (অক্টোবর ২০১৪-মার্চ ২০১৫) ও কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যাগত অধ্যাপক (অক্টোবর ২০১৫-জানুয়ারি ২০১৬) হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়াস্থ সুলতান ইদ্রিস পেনডিডিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডিসেম্বর ২০২৩-নভেম্বর ২০২৪) অভ্যাগত অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ লাভ করেছেন। তিনি পূর্বে জপানের কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপান রাষ্ট্রভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (নিনজাল)-এ যথাক্রমে ৬ মাস (অক্টোবর ১৯৯৪-মার্চ ১৯৯৫) ও ১ বছর (অক্টোবর ২০১৩-সেপ্টেম্বর ২০১৪) অভ্যাগত গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তাঁর গবেষণা কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাপ্লাইড লিঙ্গুইস্টিকস কর্তৃক প্রদত্ত আইলা সলিডারিটি অ্যাওয়ার্ড-২০০৮ লাভ করেন। অধ্যাপক ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকির একাধারে একজন শিক্ষক, গবেষক, প্রবন্ধকার এবং একজন ব্লগার ও কলাম লেখক। তাঁর গবেষণার আগ্রহের প্রসঙ্গগুলো হলো সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান, সমাজ ভাষাবিজ্ঞান, নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞান, ভাষা শিখন ও ভাষা আয়ত্ত্বকরণ, ভাষানীতি ও ভাষাপরিকল্পনা, ভাষা-সংসর্গ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা-পরিস্থিতিতে ভাষা ও রাজনীতি। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো: ১) Modality and Its Learner Variety in Japanese. Bern, Brussels, Frankfurt, New York and Oxford: Peter Lang AG, April 2012. ২) বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র ও সংস্কারের রূপরেখা, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১৭। ৩) ভাষা-সংসর্গ বিদ্যার নিরিখে বাংলা ভাষার সৃজন, ঋদ্ধায়ন ও অবনমন পরিক্রমা, সময় প্রকাশন, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২২। ৪) বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও ভাষা ইনস্টিটিউট, পুথিপ্রকাশ, ঢাকা, নভেম্বর ২০২৩। ৫) ভাষিক রাজনীতি ও ভাষা-পরিস্থিতি: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ডিসেম্বর ২০২৩। তিনি দেশে ১টি বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ব্যাপৃত রয়েছেন।