শুরুর আগে কবর-পরকাল জীবনের প্রম ঘাটি। হাদীসের ভাষ্যমতে কেউ যদি এই প্রম ঘাটি নিরাপদে পারি দিতে পারে তাহলে তার পরবর্তী ধাপগুলো অতিক্রম করা সহজ হবে। কবরকে বলা হয়েছে জান্নাতের টুকরো অথবা জাহান্নামের কোনো গর্ত। নিজ নিজ আমল অনুযায়ী সবার অবস্থান সেখানে নিশ্চিত হবে। একজন মানুষ কবরে যাওয়ার পর তাঁর সব স্বাদ-আহ্লাদ, আবেগ অনুভূতি এবং হাসি-কান্না থেমে যায়। স্তব্ধতার পাথরে চাপা পড়ে যায় তাঁর সব স্বপ ও কল্পনা, সিক্ত হয়ে ওঠে স্মৃতির কোমল জায়নামায। অনেক গল্প ও কল্পনার মাঝে তাঁর শেষ কথাটাই কেবল আবেগের দ্যোতনা সৃষ্টি করে। কোনো কোনো খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, জ্ঞানী, মহাপুরুষগণ তাঁদের অন্তিম আকুতি ও অসীয়ত লিখে রাখতে বলে গেছেন কবরের ফলকে। এসব লেখা অনেক হৃদয়স্পর্শী হয়। আকুল করে তুলে স্বজন ও যিয়ারতকারীদের মন। থামিয়ে দেয় তাঁদের চিন্তাচেতনা। পাল্টে দেয় জীবনের গতি ও গন্তব্য। ব্যাক্তিগতভাবে এসব ফলক আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। ইতিহাসের পাতায় এমন কোনো ফলকের সন্ধান পেলে আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। এসব অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে রঙিন দুনিয়ার অসারতা, আমলহীন জীবনের জন্য আফসোস এবং আরাধ্য বস্তু না পাওয়ার অমোচনীয় আক্ষেপ। এসব আফসোস ও আক্ষেপের গল্প ও কবিতা পড়তে পড়তে থমকে দাঁড়াই, ভাবিত হই। নিজেকে প্রশ্ন করি, আমিও কি আমার জীবনে এমন এক আফসোসের উপখ্যান রচনা করছি না? এক অসীম সফরে বেরিয়ে আমিও ৮ কি প্রায় গন্তব্যের কথা ভুলে যাচ্ছি না? ভুলে যাচ্ছি না মহৎ জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য? একসময় মনে হলো, পঠিত সমাধিলিপিগুলো জমা করলে একসাথে পড়তে পারবো। নিজের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যটাও মাঝেম্যধ্যে ঝালাই করার সুযোগ পাবো। আত্মভোলা ও আলস্যে ভরা জীবনে সামান্য গতি সৃষ্টির ইচ্ছায় এসব সমাধিলিপি একত্র করার প্রয়াস শুরু করি। প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদবী হাফিযাহুল্লাহর লেখা ’অন্তিম শয্যায় খ্যতিমানদের শেষ উক্তি’ বইটি। একদিন কথা প্রসঙ্গে পাণ্ডুলিপির আলোচনা করলে উনি খুবই উৎসাহ দেন। কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ের অভাবে কাজ থেমে থাকে। প্রিয়তমা জীবনসিঙ্গনী “বইটা খুবই সুন্দর হয়েছে”⸺⸺বলে সাহস দেয়। মূলত তাঁর বারবার তাকাদায় ছন্দহীন, আলস্যে ভরা জীবনে গতি সঞ্চার হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অশেষ শুকরিয়া দীর্ঘ সময় পরে হলেও বইটি পাঠকের হাতে পৌঁছাতে পারছি। এই বইয়ে উল্লেখিত বেশিরভাগ অনুভূতিই ছন্দমূলক। এ জন্য অনুবাদের ক্ষেত্রে এর ছন্দরূপকে গুরুত্ব দিয়েছি। আর পাঠকের অনুভূতি স্পর্শ করার জন্য শুধু ভাবানুবাদকে প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু যেহেতু কবিতা ও ছন্দের ব্যাপারে আমার জ্ঞান প্রায় শূন্য; তাই ছন্দগত দুর্বলতার স্ববিনয় স্বীকৃতি দিচ্ছি। তাছাড়া এ বইয়ের অন্যান্য মুদ্রণ-প্রমাদ ও তথ্যগত অসঙ্গতির দায়ভার একান্তই আমার। বইটির ব্যাপারে পাঠকের যে কোনো সুপরামর্শ সাদরে গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। বইটি পাঠকের উপকারে এলেই কেবল আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে।