ভূমিকা : ফ্রীডরিশ হোল্ডার্লিন (২০ মার্চ ১৭৭০ – ৭ জুন ১৮৪৩) তাঁর জীবন ও কবিতা দুই বিপরীত, বা পরস্পরের পরিপূরক-একজন: বহুমুখী, বহুপ্রস্, বিস্তীর্ণ, রাজকীয়, বিজয়ী, যুগস্রষ্টা বা যুগপ্রতিভূ; আর অন্যজন একতন্ত্রী, নিবিষ্ট, সীমিত, প্রগাঢ় এবং অবহেলিত, তীব্র ও ঐকান্তিক-বিশেষণগুলিকে কিছু-কিছু বদলে নিয়ে এই দ্বন্দ্বসমাসে ধরা দেন ওঅর্ডস্বার্থ ও ব্লেক, টলস্টয় ও ডস্টয়েভস্কি, উগো ও বোদলেয়ার, রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ-আর, হয়তো সবচেয়ে নিটোলভাবে, গ্যেটে ও হোন্ডার্লিন। টোমাস মান তাঁর 'দেবতা' ও 'সন্তে'র প্রতিতুলনায় গ্যেটের 'বিপরীত' হিশেবে রেখেছিলেন শিলারকে, কেননা শিলার ছিলেন রোগক্লিষ্ট ও স্বল্পায়ু, কিন্তু তাঁর সমকালীন খ্যাতি ও প্রতিপত্তির কথা মনে রাখলে তাঁকে যথার্থভাবে 'শিল্পের শহীদ' বলা যায় না। এবং 'শহীদ' কথাটায় যে-সচেতন বীরত্বের অনুষঙ্গ আছে, যা বোদলেয়ার আরোপ করেছিলেন এডগার পো-র ব্যক্তিত্বে, এবং আমরা হয়তো বোদলেয়ারের জীবনে দেখতে পাই, তারও বাইরে আছে অন্য এক ধরনের ত্যাগ ও বিনয়, এক সহজাত অবিচল তন্ময়তা, যা মূর্ত হয়েছিলো, জর্মান সাহিত্যের নবজন্মের লগ্নে, এক অখ্যাত ও অবজ্ঞাত যুবকের রচনায়।
Buddhadeb Bosu- তিনি নভেম্বর ৩০, ১৯০৮ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। ১৯২১ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় আসেন এবং প্রায় দশ বৎসর ঢাকায় শিক্ষালাভ করেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯২৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২৫ সালে ঐ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণীতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী এক ছাত্র। বি. এ. অনার্স পরীক্ষায় তিনি যে নম্বর লাভ করেন তা একটি রেকর্ড; এবং অদ্যাবধি (২০০৯) এ রেকর্ড অক্ষুণ্ণ আছে। তাঁর পিতা ভূদেব বসু পেশায় ঢাকা বারের উকিল ছিলেন। তাঁর মাতার নাম বিনয়কুমারী। বুদ্ধদেব বসুর মাতামহ চিন্তাহরণ সিংহ ছিলেন পুলিশ অফিসার। তাঁর পৈতৃক আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রামে। জন্মের চব্বিশ ঘণ্টা পরেই তাঁর মাতা বিনয়কুমারীর ১৬ বছর বয়সে ধনুষ্টঙ্কার রোগে মৃত্যু ঘটে। এতে শোকাভিভূত হয়ে তাঁর পিতা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। মাতামহ চিন্তাহরণ ও মাতামহী স্বর্ণলতা সিংহ'র কাছে প্রতিপালিত হন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেবের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথমভাগ কেটেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী আর ঢাকায়। অল্প বয়স থেকেই কবিতা রচনা করেছেন, ছেলে জুটিয়ে নাটকের দল তৈরি করেছেন। প্রগতি ও কল্লোল নামে দু'টি পত্রিকায় লেখার অভিজ্ঞতা সম্বল করে যে কয়েকজন তরুণ বাঙালি লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরজীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়াবার দুঃসাহস করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধাদি রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়ও প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। তিনি মার্চ ১৮, ১৯৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।