বনফুল বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক । তাঁর প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। পেশায় তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক । কিন্তু জীবনের একটা বড় অংশ তিনি কাটিয়েছেন সাহিত্যচর্চা করে। বনফুল ছদ্মনামেই তিনি লেখালেখি করেছেন। তাই তাঁর আসল নাম ছদ্মনামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। বনফুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের জুলাই (বাংলা ৪ শ্রাবণ, ৩০৬) বিহারের পূর্ণিয়া জেলার সাহেবগঞ্জের নিকটবর্তী মণিহারী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়। মাতার নাম মৃণালিনী দেবী। বনফুলের পিতা ছিলেন ডাক্তার । চিকিৎসার সূত্রে তাঁদের বাড়িতে অনেক লোকজনের আসা যাওয়া ছিল । চারিত্রিক উদারতার জন্যে সত্যচরণ তাদের আপন করে নিতেন। এ কারণে জমিদার থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেরই ভালোবাসা পেয়েছিলেন সত্যচরণ। বনফুলের চরিত্র গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁর পিতার চরিত্রের এই দিকটি বিশেষ কার্যকরী হয়েছিল । গুণীজনের সন্ধান পেলে সত্যচরণ নিজের বাড়িতে অতি যত্নে তাঁদের আশ্রয় দিতেন । সেই সূত্রেই তারাপদ পণ্ডিত তাঁর গৃহে আশ্রয় পান। তারাপদ পণ্ডিতের কাছেই বনফুলের হাতেখড়ি হয় । তারাপদ পণ্ডিতের স্নেহময় স্বভাব, সরলতা, সত্যবাদিতার কথা বনফুল পরবর্তী জীবনেও স্মরণ করেছেন । বনফুলরা ছিলেন ছয় ভাই ও দুই বোন- বলাইচাঁদ, ভোলানাথ, গৌরমোহন, নির্মলকুমার, অরবিন্দ, বিমলা ও উমা। বনফুলের যখন দেড় বছর বয়স, তখন তাঁর ভাই ভোলানাথ মাতৃগর্ভে আসে। এ কারণে বনফুল মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হন। বাড়ির এক মুসলমান গৃহকর্মীর স্তন্যদুগ্ধে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠেন বনফুল। সেই গৃহকর্মী তাঁর দুধ-মা । দুধ-মার সঙ্গে বনফুল ছোটবেলায় বনে বনে ঘুরে বেড়াতেন। এর ফলে তাঁর মনে অরণ্যপ্রীতি জন্মায় । ‘বনফুল’ ছদ্মনাম গ্রহণের নেপথ্যে এই দুধমার প্রভাব ছিল বলেই মনে হয় । মণিহারী প্রাইমারি স্কুলের পড়া শেষ করে বনফুল ১৯১৪ সালে সাহেবগঞ্জ রেলওয়ে হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে পড়তে পড়তে তিনি ‘নিকাশ' নামে একটি হাতেলেখা প্রত্রিকা প্রকাশ করেন। এর আগেই বনফুল দু'একটি কবিতা লিখেছিলেন। ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন হাজারিবাগে সেন্ট কলম্বাস কলেজে । সেখানে তাঁর পরিচয় হয় সাহিত্যিক সরোজকুমার রায়চৌধুরী ও কবি অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাঁরা দুজনে বনফুলের সহপাঠী ছিলেন।
আসল নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় । জন্ম: ১৯ জুলাই, ১৮৯৯ সালে। তিনি একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। তিনি বনফুল ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত। অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যেরমনিহারীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের পিতার নাম ডা. সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ও মাতা মৃণালিনী দেবী। তাদের আদি নিবাস হুগলী জেলার শিয়াখালা। কিন্তু তিনি বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ । প্রথমে মণিহারী স্কুলে এবং পরে সাহেবগঞ্জ জেলার সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেন। শেষোক্ত স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই.এস.সি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন তবে পাটনা মেডিক্যাল কলেজে থেকে এম.বি, ডিগ্রী লাভ করেন। প্যাথলজিস্ট হিসাবে ৪০ বৎসর কাজ করেছেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম লুকোতে তিনি বনফুল ছদ্মনামের আশ্রয় নেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সাহেবগঞ্জ স্কুলে পড়ার সময় মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। নিয়মিত প্রবাসী, ভারতী এবং সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকায় ছোটগল্প প্রকাশ করেন। লেখক হিসেবে বনফুল হাজারেরও বেশি কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলীসমগ্র ২২ খণ্ডে প্রকাশিত। তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি 'পদ্মভূষণ' উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে কলকাতা শহরে তাঁর মৃত্যু হয়।