মীর মশারফ হোসেন (ছদ্মনাম : গাজী মিয়া) ১২৫৪ সালের ২৮শে কার্তিক মোতাবেক ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বরে অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী লাহিনীপাড়া গ্রামে, মাতামহ মুন্সী জিনাতুল্লার গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম দৌলতনেসা, পিতার নাম মীর মোয়াজ্জেম হোসেন। মীর মশারফ হোসেন ছিলেন তাঁর পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের দ্বিতীয় পক্ষের প্রথম সন্তান। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মীর মশার্রফ হোসেন ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ। মীর মশার্রফ হোসেনের পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন জমিদার । রাজ-কার্যে যথাযথ যোগ্যতা ও পারদর্শিতার জন্য এঁরা ‘মীর’ উপাধি প্রাপ্ত হন। প্রকৃতপক্ষে এঁদের বংশ-পরিচিতি ছিল ‘সৈয়দ’। শিক্ষা জীবন মীর মশারফ হোসেন প্রথম ভর্তি হন কুমারখালী ইংরেজী স্কুলে। উক্ত স্কুলে তিনি স্বল্প-কালীন পাঠ নিয়ে পিতার সাথে পদমদীতে চলে যান এবং পদমদী নবাব-স্কুলে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন। বিভিন্ন কারণে পদমদীতে মীরের পড়া-লেখার ততটা অগ্রগতি হয়নি, এর ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যে পদমদী নবাব স্কুল ত্যাগ করে পিতার নির্দেশে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে কৃষ্ণনগর চলে যান । এখানে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন । কৃষ্ণনগরে মীর মশার্রফ হোসেন মাত্র সাত মাস অধ্যয়ন করেন। অতঃপর তিনি চলে যান কলকাতা। কলকাতা বাবার বন্ধু নাদির হোসেনের বাসায় থেকে কালীঘাট স্কুলে ভর্তি হন। এখানে সম্ভবত অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন । বিবাহিত জীবন প্রথম বিয়ে : মীর মশারফ হোসেন কলকাতায় তাঁর বাবার বন্ধু নাদির হোসেনের বাড়িতে থেকে যখন অস্টম শ্রেণীতে পড়া-লেখা করছিলেন সম্ভবত সেই সময় ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ১৯ মে, (১২৭২ সাল জ্যৈষ্ঠ) নাদির হোসেনর দ্বিতীয় কন্যা আজীজ-উন-নিসার সঙ্গে তাঁর প্রথমে বিয়ে হয়। তখন মীরের বয়স ছিল সতের বছর। আজীজ-উন-নিসার সাথে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত মীরের পড়াশুনার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে তাঁর পড়া-লেখার ইতিহাস আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । দ্বিতীয় বিয়ে : একটি বিশেষ কারণে প্রথম বিয়ে সুখের না হওয়ায় প্রথম বিয়ের আট বছর পর ১২৮০ সালের মাঘ মাসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাঁওতা গ্রামের এক বিধবার কন্যা, নাম কুলসুম। বিবি কুলসুমের বয়স বার বছর, অপর দিকে মীর মশার্রফ হোসেনের ছাব্বিশ বছর।
(নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ - ১৯১২) ছিলেন একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দাীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা গদ্যের ঊণ্মেষকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিষাদ সিন্ধু নামক ঐতিহাসিক রচনার জন্য সপুরিচিত ও সাধারণ্যে জনপ্রিয়। তিনি তৎকালীন বৃটিশ ভারতে (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখাপড়ার জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে ফরিদপুরের পদমদীতে ও শেষে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। তিনি কিছুকাল কলকাতায় বসবাস করেন। মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য ও প্রবন্ধ রচনা করে আধুনিক যুগে মুসলিম রচিত বাংলা সাহিত্যে সমৃদ্ধ ধারার প্রবর্তন করেন। সাহিত্যরস সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। কারবালার বিষাদময় ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস "বিষাদসিন্ধু" তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলার মুসলমান সমাজে আধুনিক সাহিত্য ধারার সূচনা করে। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। তবে তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর বলে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু কিছু গবেষক তার জন্ম তারিখ ১৮৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর বলে দাবী করেন। তিনি মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং দৌলতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠার বছরে বয়সে তারঁ পিতৃবন্ধুর কন্যা আজিজুন্নেসার সাথে বিয়ে হয়। ১৯১২ সালে দেলদুয়ার এস্টেটে ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন। তাকে পদমদীতে দাফন করা হয়।