এক পূণ্যবতী নারী প্রতিদিন তার সন্তানকে ফজরের পূর্বে জাগিয়ে তুলে আলো-আঁধারির মুহূর্তে নিজেকে ঘোমটা ও চাদরাবৃত করে বেরিয়ে পড়তেন মসজিদের উদ্দেশ্যে। বালক ছেলেটি ঠিকমতো মসজিদে পৌঁছুতে পারবে কি না, এই ভয় ছিল তার মনে। ঘর থেকে মসজিদ ছিলো অনেকটাই দূর, আর পথটিও আঁধারে ঢাকা। এভাবেই চলতো দিনের পর দিন। . মায়ের ঐকান্তিক সেই প্রচেষ্টায় বালক ছেলেটি মাত্র দশ বছর বয়সেই পবিত্র কুরআনের হিফজ শেষ করেন। অতঃপর একদিন এই বালক আমাদের ইতিহাসকেও করেন সমৃদ্ধ। . এই পূণ্যবতী নারীটি ছিলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহি.-এর মহিয়সী মা। . ইতিহাসের এরকম অসংখ্য পৃষ্ঠা আছে, যা আমাদের চোখ ভিজিয়ে দেয়। হৃদয়কে উত্তাল করে তোলে। অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতিচারণ আর বেদনায় মনের ভেতর আবেগের এমন বাষ্প বইয়ে দেয় যে, হৃদয় হু হু করে উঠে আমাদের। . আমরা তাই এখনও খোঁজে ফিরি সেই মহিয়সী নারীদের, যারা নিজেকে ঘোমটা ও চাদরাবৃত করে আদরের সন্তানদের আলো-আঁধারির মুহূর্তে প্রতিদিন দিয়ে আসবেন আল্লাহর ঘরে। . ‘কপালে তাদের সিজদার ছাপ’—এমনই কিছু মানুষদের জীবনের টুকরো টুকরো আনোখা গল্প নিয়ে রচিত এক গ্রন্থ। যে গল্পের মানুষেরা আমাদের মুসলিম জীবনের চিরকালীন ঐতিহ্য ও অনুপ্রেরণার আলোকিত বাতিঘর। . ‘কপালে তাদের সিজদার ছাপ’, ‘তারাই মোদের পূর্বপুরুষ’ ও ‘দুজন মহান কর্মবীর’ নামক তিনটি শিরোনামে আটজন সাহাবায়ে কেরাম, কয়েকজন তাবেঈ ও দুজন কর্মবীরের জীবনের কিছু আনোখা গল্পের সংকলন এই গ্রন্থ। প্রতিটি গল্পের শেষেই আছে আমাদের জন্য কিছু অনুপম আদর্শের শিক্ষা। . আরববিশ্বের বিখ্যাত আলেম ও লেখক ড. আয়েয আল কারনীর লেখা অসামান্য এই গ্রন্থটির সহজ ও ঝরঝরে বাংলা অনুবাদ করেছেন আহলুল্লাহ মুনিব। পড়তে গেলে মনে হবে, এ যেন মধুর বাংলাভাষাতেই লিখিত এক সহজ জীবনপাঠ্য বই। যেখানের প্রতিটি গল্প, প্রতিটি অধ্যায় আপনাকে সেই জীবনের দিকেই হাতছানি দিয়ে ডাকবে, যে জীবন মুসলিম ঐতিহ্যের, আমাদের হারানো কাফেলার।