খ্যাতিমান ডাক্তার, রংপুরে ‘হাইপারটেনসন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বাংলাদেশের খ্যাতকীর্তি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমানে বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৬১ সালের ১০ই ডিসেম্বর বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর পিতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ওয়াছিম উদ্দিন আহমেদ ও মাতা মোছা. ওয়ালেদা খাতুন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা প্রাথমিক (১৯৭২), মাধ্যমিক (১৯৭৭) ও উচ্চমাধ্যমিক (১৯৭৯) বগুড়ার ধুনটের গোসাইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোসাইবাড়ী এ. এ. উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজে। পঞ্চম (১৯৭২) ও অষ্টম (১৯৭৫) শ্রেণিতে সরকারি মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি অর্জন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে মেডিসিনে এফসিপিএস এবং ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত তদানীন্তন আইপিজিএম অ্যান্ড আর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ইন্টারনাল মেডিসিনের ওপর এমডি ডিগ্রি অর্জন। ২০০৫ সালে আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস থেকে এফএসিপি এবং ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের দি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবার্গ থেকে এফআরসিপি ডিগ্রি অর্জন। অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন কাটিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মস্থলগুলো হলো কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর তৎকালীন থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকার মহাখালীস্থ সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ প্রভৃতি। সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, বগুড়াতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিসিএস ক্যাডারের অফিসারদের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক এবং মেডিকেল সম্পর্কিত উচ্চতর ডিগ্রির অন্যতম প্রধান পরীক্ষক। গ্রামবাংলার সাদামাটা সাধারণ মানুষকে তিনি ভালোবাসেন, তাদেরকে সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান-বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টির বেশি প্রবন্ধ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনারে উপস্থাপন করেছেন তিনি। অসংখ্য মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ৪০টির বেশি প্রবন্ধ। দেশের পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে স্বাস্থ্য সমস্যা ও সচেতনতা নিয়ে সাক্ষাৎকার ও আলোচনা অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করছেন এবং ইতোমধ্যে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সাধারণ পাঠক ও রোগীদের বোধগম্য বাংলা ভাষায় তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত বই ‘রক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপ’ (২০২৪)। গ্রন্থটি সর্ব সাধারণমহলে ব্যাপক আদৃত হয়েছে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন এদেশের মানুষের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রংপুর শহরে ‘হাইপারটেনশন এ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’, ‘অটিজম সেন্টার’ স্থাপন করেন এবং ‘সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে’ দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে পেশায় চিকিৎসক হিসেবে রোগীদের নিয়মিত সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিজ গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, ডা. ওয়াছিম ওয়ালেদা বহুমুখী কল্যাণ ফাউন্ডেশন, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, বয়স্ক ভাতা প্রদান, গুচ্ছগ্রামে জমিদাতা, গণগ্রন্থাগার, মসজিদ, কবরস্থান প্রতিষ্ঠাসহ নানা সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। তাঁর এই কাজগুলো সফল, সার্থক ও স্বায়ী হবে দীর্ঘদিন। অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেসবের কয়েকটি হলো : বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনের মেডিসিন ফেলো, রংপুর ডায়াবেটিক সমিতির জীবন সদস্য, বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতির জীবন সদস্য ও বর্তমানে সহসভাপতি, বগুড়া ভাই পাগলা মাজার জামে মসজিদের সহসভাপতি, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের জীবন সদস্য, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের জীবন সদস্য প্রভৃতি অন্যতম। অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত ৭টি বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে যুগের আলো গুণিজন সংবর্ধনা (২০১৩), জাকারিয়া মেমোরিয়াল মেডেল (২০১১), চিকিৎসা পদক (২০২১), প্রফেসর এসজিএম চৌধুরী মেমোরিয়াল অরেশন গোল্ড মেডেল (২০২৩) প্রভৃতি অন্যতম। ২০২২ সালে তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ’ অর্জন করেন।