কৃষ্ণপক্ষ। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এবার রেজ্জাক আলী হাতে একটা রাইফেল তুলে নিলো। নতুন রাইফেল। চাইনিজ রাইফেল। এর ধাতব অংশগুলো চক চক করছে। মনে হচ্ছে ম্যাগজিন ভরা গুলি। রাজ্জাক আলী টুলুর দিকে রাইফেল তাক করে ধরে আছে। বারবার দমক দিয়ে মুক্তি বাহিনীর কথা জানতে চাইছে। টুলু নির্বিকার। সে একটুও ভয় পাচ্ছে না।সে অপলক দৃষ্টিতে রেজ্জাকের হাতের রাইফেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভীষণ পানি পিপাসা লেগেছে। রেজ্জাক আলী আর দেরি করল না। শক্তভাবে ট্রিগার চেপে ধরল। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিয়ে রাইফেলের গুলি টুলুর বুকটা ঝাঝরা করে দিলো। টুলুর মাথাটা বুকের কাছে ঝুলে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর দুজন রাজাকার টুলুর মৃতদেহখানার বাঁধন খুলে নিয়ে পানিতে ফেলে দিলো। প্রায় সাত দিন মৃতদেহখানা কৈবল্যধামের আশপাশেই ভেসে ছিলো। তার ছোটো শরীরখানা নিয়ে কবরস্থ করার সাহস কারো হয়নি। টুলুকে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার বয়স তখন মাত্র দশ বছর। টুলু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তার বয়স হতো ষাট বছর। শহর বানু এখনও বেঁচে আছেন। তার আরও দুটি ছেলে আছে। তারা বিয়ে থা করেছে। তাদের ছেলেপিলে আছে। কিন্তু শহর বানুর স্মৃতির উঠোনে টুলু আজও হাফ প্যান্ট পরে ঘুরেফিরে আসে।
জন্ম বৃহত্তর সিলেটে। আইয়ুব খান তখন ক্ষমতায়। বাল্য পুরোটাই কেটেছে সামরিক জান্তার বুটের নীচে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ! ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে কাটে যাপিত জীবন। যৌবনের বেশি অংশ জুড়ে এরশাদের দুঃশাসন। স্বৈরাচার বিরোধী মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ। নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে কেটে যায় রাগী তারুণ্যের আটটি বছর। তারপর বিভিন্ন গ্যারিসনে গ্যারিসনে কাটে আরো সাতাশ বছর। জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিয়ে আফ্রিকার সাউথ সুদানে কেটে যায় জীবনের খানিকটা সময়। সেখান থেকে গৃহযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরা। এই চড়াই-উৎরাই পেশাতে থেকেও সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্কটা চিরদিনের। গ্রামীণ ব্যাংকের মাসিক পত্রিকা উদ্যোগ সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ইতোমধ্যে বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 'বাড়ী নির্মাণের নানাদিক’ প্রবন্ধটি মাসিক উদ্যোগে প্রকাশিত হলে সেটি সেই সংখ্যার সেরা লেখা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস কর্তৃক প্রশংসিত হয়। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমেদ শরীফ স্যারের স্নেহধন্য হয়ে ঋদ্ধ হয়েছে মনোজগৎ। শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ তার প্রথম পছন্দ।