একটি গ্রন্থের আলোচনা প্রসঙ্গে দিলীপকুমার | রায় লিখেছিলেন: ‘প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা গোপন গ্রন্থি আছে, জীবন ভরে যার চারপাশে তার সুখ-দুঃখের পশরা সজ্জিত হতে থাকে। যার চারপাশে তার আলো ছায়া আশা নিরাশা অনুরাগ বিরাগের লুকোচুরি খেলা চলতে থাকে, যে রহস্যগ্রন্থিকে ঘিরে তার জীবনের তপস্যা ও সাধনা মূর্ত হয়ে ওঠে।’ এ শুধু কথার কথা নয়। এই সত্য দিলীপকুমারের জীবনে বহুবার মূর্ত হয়ে উঠেছে। এই রহস্যময়তা তাঁর জীবনে একটা বড় অংশ অধিকার করে নিয়েছিল। ফলে, দিলীপকুমারের বেশির ভাগ রচনাই চরিত্রে মিস্টিক বা অধ্যাত্মভাববহ । আধুনিক জীবনের মধ্যেই অলৌকিক উপস্থিতির বিচিত্র অনুভবে তাঁর সাহিত্যসৃষ্টি স্পন্দিত। সেই কারণেই রচিত হল তাঁর অঘটনী কাহিনীমালার নানা সম্ভার। তিনি লিখলেন তাঁর জনপ্রিয়তম রমন্যাস ‘অঘটন আজো ঘটে'। হয়তো রহস্য অবিশ্বাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি কিন্তু এই বই দিলীপকুমারের জীবনের সত্যোচ্চারণ। একই সঙ্গে তা ‘শ্রদ্ধাবান্ জিজ্ঞাসু’ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অমল, শ্যামঠাকুর, কৃষ্ণদাস, মন্দিরা, সতী, আনন্দগিরি প্রভৃতি যেসব মানুষের কাহিনী শুনিয়েছে অসিত, তাদের জীবনে অঘটন খুলে দিয়েছে এক অতীন্দ্রিয় জগতের দরজা, জাগিয়ে তুলেছে বিস্ময়ের গভীর অনুভূতি। বাস্তববাদী কথাসাহিত্যের পাশে সত্যসন্ধিৎসু অলৌকিক কাহিনীর এমন বিচিত্র বিষয়-বিন্যাস, এই . উপন্যাসটিকে রসোত্তীর্ণ ও স্বতন্ত্র করে তুলেছে।