আধ্যাত্ম-জিজ্ঞাসা মানুষের জন্মগত নয়, কিন্তু তার জীবনধারায় মিশে আছে ভগবৎবোধ। মানুষ তার এই বোধির খবর কখনও জানে, কখনও জানে না। কখনও স্বীকার করে, কখনও করে না। অন্যদিকে এই মায়াময় জগতের বন্ধনে মানুষ আপ্লুত। আবার বাস্তবের রূঢ় অভিঘাতেও মানুষ জর্জরিত। জীবনের এই দুটি ধারার মাঝখানে আছে আত্মা। ধর্ম ও সত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত এই কাহিনিতে, ঈশ্বর-জিজ্ঞাসার অনন্ত উত্থান-পতন ও মৃত্তিকালগ্ন ঐহিক জীবনযাপনের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে, আত্মার অবিরত বিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। নন্দরাজ, তাঁর স্ত্রী ফুল্লরা এবং পুত্র একান্ত ও অন্যান্য চরিত্রকে ঘিরে যে-নাটক অভিনীত হচ্ছে জীবনের মঞ্চে, তার মূলে আছে ছোট ছোট সুখের জন্য মানুষের ইন্দ্রিয়গুলির স্মৃতিকাতর বাসনামুখর সংগ্রাম। যুক্তি ও তর্কের বাস্তব ছোঁয়ায় এই কাহিনি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত এই উপন্যাসের এক অনন্যসাধারণ চরিত্র, একাধারে গুরু, প্রেমের দূত ও আধ্যাত্মিক গায়ক গোঁসাইজির চরিত্রের মাধ্যমে আত্মারই জয় হয়। ভগবানের সামীপ্য লাভের জন্য আত্মার যে-চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতীক হল 'পাখা' অর্থাৎ ডানা। সংশয় ও চেনা-অচেনা কামনার নিম্নগামী টান, যাকে 'বাঁধন' বলা হয়, তার সঙ্গে ওই পাখা বা ডানা সর্বদাই যুদ্ধ করে চলে। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়, তারই কথারূপ দিলীপকুমার রায়ের এই রমন্যাস ‘পাখা ও বাঁধন’