সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসাকেন্দ্র থাকলেও হাজার হাজার মানুষ আছেন যাঁরা স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে থাকেন। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার মধ্যে সবসময় একটা ব্যবধান থাকে। এ ব্যবধান অতীতে অনেক বেশি ছিল। তা ক্রমান্বয়ে কমে আসলেও ব্যবধান এখনও বিদ্যমান। স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকা এ ব্যবধান সৃষ্টিতে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব যথাসময়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসায় অনেক বিলম্ব ঘটায়। এ বিলম্বিত চিকিৎসার খরচ যেমন বেশি হয়, তেমনি রোগ অনেক ক্ষেত্রে মারণঘাতী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কারণে দেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিরোগসহ মারণঘাতী অনেক অসংক্রামক রোগের প্রকোপ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যসব কারণের সাথে এসব রোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণও আছে। এসব মারণঘাতী রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকলে রোগের আশঙ্কা ও চিকিৎসাব্যয় সংগত কারণেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই সকল পর্যায়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতার ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। বিভিন্ন সমীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে যে, দারিদ্র্য অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া অনেক পরিবার শুধুমাত্র কোনো সদস্যের অসুস্থতাজনিত ব্যয় ও মৃত্যুর কারণে পুনরায় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। উদ্দীপনের পরিচালনা পর্ষদ, সাধারণ পর্ষদ এবং জোনাল ম্যানেজারসহ মাঠ পর্যায়ে সকল পর্যায়ের কর্মীর অংশগ্রহণে উদ্দীপন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছে। আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে স্বাস্থ্য সচেতনতার ভূমিকা অনেক। তাছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রান্তিক পর্যায়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা এবং সাশ্রয়ী/বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ অন্যান্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশব্যাপী উদ্দীপনের স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী এ কর্মসূচির অন্যতম অংশ হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ে ‘স্বাস্থ্য আপা’ নামে নারী স্বেচ্ছা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মী সৃজন। কর্মসূচি চালু করার পরে এর দ্রুত সম্প্রসারণে উদ্দীপনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইমেরিটাস চেয়ারম্যান জনাব শহীদ হোসেন তালুকদারের উদ্যোগ, সমর্থন এবং অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘স্বাস্থ্য আপা’ সৃজনের কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান জনাব ফয়সল মুহম্মদ ওয়াহিদ এবং সহযোগী জনাব খন্দকার মোঃ বোরহানুল আরেফিনের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। ‘স্বাস্থ্য আপা’ সৃজনে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন প্রতি অঞ্চলে নিয়োজিত এফপিও (স্বাস্থ্য)। তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া ‘স্বাস্থ্য আপা’ সৃজন কার্যক্রমে গতি পাওয়া সম্ভব নয়। এ প্রচেষ্টার উপাদান হিসেবে ‘স্বাস্থ্য আপা’ নামে এ সচেতনতাধর্মী বই লেখার উদ্যোগ। এ লেখা দ্রুত সম্পন্ন করা ও প্রকাশ করার বিষয়ে উদ্দীপনের স্বাস্থ্য কার্যক্রমের অংশীদার প্রোব বাংলাদেশ লি. এর মি. বিজয় দাসের নিরন্তর অনুরোধ ও উদ্যোগকে অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রবন্ধ আকারে লেখা কম্পিউটার কম্পোজ করার জন্য উদ্দীপনের অফিসার জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলামকে ধন্যবাদ। ‘স্বাস্থ্য আপা’ প্রকাশে ঝুমঝুমি প্রকাশনের সাথে সম্পর্কিত সকলকে ধন্যবাদ জানাই।