বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার অফুরান অনুগ্রহ যে, তিনি জান্নাতে প্রবেশের জন্য বহু পথ খোলা রেখেছেন। তিনি জানেন, তাঁর বান্দারা পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশায় বিভক্ত থাকবে। সবার জন্য সব আমল সহজসাধ্য হবে না। তাই তাকে সন্তুষ্ট করে জান্নাত অবধারিত করার জন্য অত্যন্ত সহজ আমলের দুয়ার তিনি খোলা রেখেছেন। এক সাহাবী একদিন আল্লাহর রাসূলের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা একটি বেদুঈন গোত্র, আমাদেরকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন। নবীজি বললেন, কোনো ভালো কাজ তুচ্ছ ভেবে ছেড়ে দিও না। হোক তা কাউকে রশির একটি টুকরো দান করা কিংবা নিজের পাত্র থেকে অন্যের পাত্রে কিছু পানি ঢেলে দেয়া, কিংবা মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা কিংবা নিঃসঙ্গ-বিষণ্ণ ব্যক্তিকে সঙ্গ দিয়ে তার বিষণ্ণতা দূর করা অথবা মূল্যহীন একটা জুতার ফিতা দান করা। এই হাদিসে এমনকিছু জান্নাত লাভের আমলের কথা বলা হয়েছে, যা এতদিন আমরা অতি তুচ্ছভেবে আমলগুলো করতে আগ্রহ প্রকাশ করিনি কিংবা এড়িয়ে গেছি... এক হাদিসে নবীজি বলেন, লোকটি ইতঃপূর্বে কখনো কোনো নেক আমল করেনি। (না সালাত আদায় করেছে, না রোজা রেখেছে। না আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, না দান-সাদাকা করেছে। না রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত করেছে। কিছুই না।) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে জান্নাত দান করলেন। কারণ, পথ থেকে একটি কাঁটাদার গাছের ডাল সে সরিয়ে দিয়েছিল। আরেকটি হাদিসে নবীজি বলেন, পিপাসার যন্ত্রণায় মৃতপ্রায় একটি কুকুরকে পানি পান করানোর ফলে বনী ইসরাইলের একজন ব্যভিচারিণী নারীকে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করেছেন। অন্যদিকে, একজন মহিলা শুধু এই জন্য জাহান্নামী হয়েছে যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে অনাহারে হত্যা করেছিল। সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে অতি তুচ্ছ কোনো ভালো কাজের সুযোগ পেলে সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা যেমন জরুরী; তেমনি মন্দ কাজ ক্ষুদ্র হলেও তা পরিহার করা জরুরী। কেননা, একটিমাত্র অপকর্ম মানুষকে জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করতে পারে। অন্যদিকে একটি মাত্র ভালো কাজ মানুষকে নিয়ে যেতে পারে চিরসুখের নিবাস জান্নাতে। আর তাই ছোট-বড় সব ধরনের আমলকেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা, জান্নাতে যাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন। তিনি যেমন সমুদ্র পরিমাণ গুনাহ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্র একটি ভালো কাজের উপর সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাত দিতে পারেন, তেমনি উহুদ পাহাড়সম নেকী থাকা সত্ত্বেও একটি গুনাহের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে জাহান্নামেও নিক্ষেপ করতে পারেন। আর তাই, কীভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, তার উপায়গুলো দলীল এবং ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করা হয়েছে। আল কুরআনের যে যে আয়াতে আল্লাহ জান্নাতের কথা বলেছেন এবং যে সকল হাদিসে আল্লাহর রাসূল জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তা অত্যন্ত যত্নের সাথে সন্নিবেশিত হয়েছে এই গ্রন্থে। বইটি পাবলিশ করেছে দ্বীন পাবলিকেশন।