"উপন্যাস সমগ্র ২" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা বিমল করের উপন্যাস সমগ্র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে ইতিপূর্বেই। উক্ত গ্রন্থে লেখকের সাহিত্য জীবনের প্রথম পর্বের ছয়টি রচনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। আলােচ্য দ্বিতীয় খণ্ডেও সমসংখ্যক লেখাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই রচনাগুলির একটি বা দুটি লেখা বাদ দিলে অন্যগুলি পরবর্তী সময়ের। যেমন, ‘স্বর্গখেলনা খােয়াই পূর্ববর্তী রচনা, অন্তত বছর পঁয়ত্রিশ আগেকার, বেশিও হতে পারে। উপন্যাস লেখার সময় বিমল কর নিজস্ব একটা ধারণাকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন—সে তাঁর লেখক জীবনের শুরুতেই হােক বা শেষপর্বেই হােক। এটা ঠিক যে, সুসংবদ্ধ পরিচ্ছন্ন কাহিনী গঠন উপন্যাসের একটি বড় গুণ। তবে এই গুণটিকে প্রধানতম বা একমাত্র গুণ বলে লেখক মনে করেন না। স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায় ‘স্বর্গখেলনা’ উপন্যাসটি ততটা কাহিনী-নির্ভর নয়, যতটা চরিত্র ও পরিবেশ নির্ভর। খােয়াই’ এমন একটি রচনা যা প্রচলিত অর্থে উপন্যাস বলে বিবেচিত হবে না। সন্দেহ নেই, এই রচনাটির মুল ধারণা বিদেশি এক লেখকের লেখা থেকে পাওয়া, লেখক যা স্বীকার করেছেন—তবে সেই লেখার অনুসরণ বা অনুকরণ নয়। বিমল করের ক্ষেত্রে ‘খােয়াই’ সবার্থেই পরীক্ষামূলক। বর্ণনায় ও ব্যঞ্জনায় ইঙ্গিতধর্মী। লেখাটিকে কবিতার সমধর্মী বললেও বলা যায়। অন্য চারটি উপন্যাস: ‘একা একা ‘নিরস্ত্র’ ‘সহভূমিকা’ ‘পূর্ণ অপূর্ণ’—মােটামুটিভাবে লেখকের পরিণত সাহিত্য জীবনের রচনা। একা একা' যথার্থ অর্থে প্রেমের উপন্যাস নয়। মানুষের জীবনে সব ভ্রান্তি কি সংশােধনযােগ্য হয়! ব্যর্থ এক প্রেম বয়স্ক দুই নরনারীকে আজও হয়তাে বেদনা দেয়, বিড়ম্বিত করে। নিরস্ত্র’ ও ‘সহভূমিকা’ আজকের সমাজব্যবস্থার বাহুল্যহীন কাহিনী। স্পষ্ট ও সত্যভাষণে কুণ্ঠাহীন। সহভূমিকা’ উপন্যাসটিকে সরাসরি রাজনৈতিক উপন্যাস বলা যাবে না। তবে এই রচনাটিতে প্রচ্ছন্নভাবে এক রাজনৈতিক চিন্তার সঙ্গে কারও কারও ব্যক্তিগত বিরূপতা ও বিতর্ক অবশ্যই উপেক্ষা করার মতন নয়। পূর্ণ অপূর্ণ’ বিমল করের। শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলির অন্যতম, বহু পঠিত। তার চেয়েও বড় কথা হল, লেখক নিজে বার বার স্বীকার করেছেন, জীবনের তাৎপর্য ও অর্থ অন্বেষণের যদি কোনও মূল্য থাকে তবে এই উপন্যাসটিই তাঁর আত্মসন্ধান। মানসিকভাবে এই রচনাটিকেই তিনি নিজের সান্ত্বনা ও আশ্বাস বলে মনে করেন। নিজস্ব জীবনজিজ্ঞাসা ও ধ্যানধারণার প্রসঙ্গে পূর্ণ অপূর্ণ তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা বলে স্বীকার করেন অনেকেই। বিমল করের রচনার সকল বৈশিষ্ট্যই আলােচ্য রচনাগুলিতে পাওয়া যাবে।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।