"উপন্যাস সমগ্র ৪" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে বিমল কর লিখেছেন কম নয়। সেই রচনাগুলির মধ্য থেকে লেখকের নিজস্ব নির্বাচন অনুসারে তাঁর উপন্যাস সমগ্র প্রকাশিত হচ্ছে গত কয়েক বছর। অন্যান্য খণ্ডের মতন চতুর্থ খণ্ডটিতে দু একটি পুরনাে লেখার সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের কয়েকটি রচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফানুসের আয়ু’ উপন্যাসটি বছর চল্লিশ বিয়াল্লিশ আগেকার লেখা। নিঃসঙ্গ, অবহেলিত, বিষন্ন এই কিশােরের জীবনকথা যৌবনে তাকে আরও যন্ত্রণাময় হতাশ করে তুলেছে। জীবন সম্পর্কে তার ধারণা হয়েছে: এই অস্তিত্ব অর্থহীন; অতএব অপ্রয়ােজনীয়। ‘দংশন’ দুই যুবক-যুবতীর সম্পর্ককে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা। এরা দুজনেই পরিণত সাবালক। প্রেম ভালবাসা, জৈব আকর্ষণ—স্বাভাবিক কোনও কিছুই তাদের একত্র করেনি। করেছিল শুধুমাত্র নেশা, যে-নেশা ওষুধ জাতীয় হলেও রক্তের সঙ্গে মিশে গেলে বেদনা, যন্ত্রণা, মানসিক অস্থিরতাকে ক্রমশই অসাড় করে তােলে। এই নেশার টানেই ওরা পরস্পরের প্রয়ােজনীয় সঙ্গী, সহবাসী আবার একে অন্যের জীবনের অবলম্বনও। ‘অলস ভ্রমণ’ কিছু যুবকের কাহিনী, যারা সাবালক হলেও মনের দিক থেকে অপরিণত। বা বলা যেতে পারে, এরা এখনও নিজেদের সম্পর্কে সেভাবে সচেতন নয়। যে কোনও কারণেই হােক, পারিবারিক বা সামাজিক, এমনভাবে জীবন কাটাচ্ছে যেন এরা ‘স্লিপ ওয়াকারস’—অর্থাৎ ঘুমের ঘােরে হেঁটে বেড়াচ্ছে অবচেতন অবস্থায়। ‘দ্বন্দ্ব’ আধুনিক নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতার কাহিনী। কখনও আপাত সুসম্পর্ক, কখনও পরস্পরের প্রতি বিরাগ, বিরক্তি, এমন কী বিদ্বেষ ও ঘৃণা। তবু সংসার জীবনে এরা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, পারে না পুরােপুরি উদাসীন হতে। ‘কালের নায়ক’ উপন্যাসটির দুটি খণ্ড। কলকাতার সম্রান্ত মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের ভাঙনের কাহিনী হিসেবে গ্রন্থটি প্রায় নিখুঁত শিল্পকর্ম। সংসারের গতি বড় জটিল। ‘উপন্যাস সমগ্র’-এর চতুর্থ খণ্ডটির রচনাগুলি বৈচিত্র্যর দিক থেকে আকর্ষণীয় হবে বলেই অনুমান করি।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।