মুসলিমদের হাজার বছরের শিক্ষা-সভ্যতা- সংস্কৃতির বাতিঘর ছিল এই আন্দালুস, যা আজকের গোটা স্পেন এবং পর্তুগালের একাংশে পড়েছে। টানা ৮০০ বছর তাঁরা শাসন করেছেন এই দেশ, করেছেন একে দুনিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর জনপদ। আন্দালুস যখন বৈদ্যুতিক আলোয় তারার হাটের মতো ঝলমল করছে, ইউরোপ তখন অন্ধ ভিখিরির মতো ছড়ি হাতে নিয়ে পথ হাতড়াচ্ছে; আর আমেরিকা তখনো ডিম ফুটে বেরোয়নি। তাই আন্দালুস নিল দুনিয়াকে পথ দেখাবার দায়—বিজ্ঞানে, গণিতে, ধর্মতত্ত্বে, দর্শনে, শিল্পে, স্থাপত্যে, সাহিত্যে, অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে, নগরায়নে। সুদীর্ঘ এ সময়ে আন্দালুস বহু রাজ-রাজত্বের দেখা পায়। তবে কখনোই তা নিস্তরঙ্গ নিরাপদ ছিল না; সংঘবদ্ধ খ্রিষ্টশক্তির সঙ্গে মুসলিমদের লড়াই-সংগ্রাম লেগেই ছিল। এই নিরবচ্ছিন্ন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শেষ পর্যায়ে ইউরোপীয়রা যখন মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নেয় আন্দালুস, মূলত তখন থেকেই ইউরোপে উন্নতির সূচনা ঘটে। আন্দালুসে মুসলিম শাসনের বিলুপ্তি ঘটেছিল এক সংকটময় যুগসন্ধিক্ষণে। দীনি-দুনিয়াবি নানা অনুঘটক প্রশস্ত করেছে পতনের পথ। অভ্যন্তরীণ বিবাদ ছিল, রাজকীয় বিলাস ছিল, জিহাদে অনীহা ছিল, গোত্রীয় স্বজনপ্রীতি ছিল, গৃহযুদ্ধ ছিল, বিশ্বাসঘাতকতা ছিল এবং খ্রিষ্টানদের সঙ্গে আঁতাতের মতো লজ্জাজনক ঘটনাও ছিল। এসবেরই পরিণামে অগণিত মুসলিমকে হত্যা করা হয়, বেঁচে যাওয়াদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় আফ্রিকায়।