‘‘র’-এর কাওবয়েরা’ বইটি মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে বি রমনের একটি স্মৃতিধর্মী লেখা। ‘র’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২৬ বছর গোয়েন্দা হিসেবে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। বইটিতে ভারতের সমসাময়িক ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়গুলোর ওপর আলোকপাত রয়েছে। যার মধ্যে এই সময়ে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১৯৭১ সালের যুদ্ধ; উত্তর-পূর্ব ভারতে অস্থিরতা; পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে বিদ্রোহ; জরুরি অবস্থা জারি; আফগান যুদ্ধ; ইন্দিরা গান্ধী, মোরারজি দেশাই, রাজীব গান্ধী, ভিপি সিং, চন্দ্রশেখর ও নরসিমা রাওয়ের অধীনে গোয়েন্দা কার্যক্রম ইত্যাদি ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে । একজন প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে বি. রমন নিয়মিত ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, সন্ত্রাস-বিরোধী এবং সামরিক বিষয় নিয়ে লিখতেন। তিনি ভারতের অগ্রগণ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন। ব্যক্তিগত মন ও মনন দিয়ে কোনো ঘটনাকে যখন দেখা হয় তখন বর্ণনায় তার একটি প্রভাব থাকে। সেই প্রভাব থেকে বইয়ের বিবরণ ঊর্ধ্বে থাকবে তা আশা করা যায় না। আর এই উপমহাদেশের দৃশ্যত দুইটি বৈরি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা কার্যক্রম যে কোনো একটির ভেতর থেকে দেখার বিষয়টি অন্যপক্ষের দেখার সাথে মিলবে না। যদিও অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে সেটি সেভাবে ঠিক নাও হতে পারে। ‘র-এর কাওবয়েরা’ বইয়ের অনেক অধ্যায়ে এর ছাপ লক্ষ্য করা যেতে পারে। তবে এই বইটির অনন্য দিকটি হলো, ভারত রাষ্ট্রের আড়াই দশকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ সময় ও পরিবর্তনকে একেবারে ভেতর থেকে অবলোকন করা। যে-কোনো অনুসন্ধিৎসু পাঠক লেখকের বর্ণনার আন্ডার লাইন অনেক অকথিত বিষয় বা বার্তা পাঠ করতে পারবেন যা লেখকের পেশাগত সীমাবদ্ধতা বা কমিটমেন্টের কারণে খোলামেলাভাবে তুলে আনা সম্ভব ছিল না। এই বইয়ের আরেকটি দিক হলো, বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় লেখক যারা তাদের গোয়েন্দা জীবনের ওপর বই লিখেছেন, তাদের লেখায় নিজেকে বড় করে উপস্থাপন অথবা ভিন্ন মতের কাউকে ছোট করে উপস্থাপনের প্রবণতা দেখা যায়। আলোচ্য বইয়ে এ ধরনের অতি-বিবৃতি, অতিরঞ্জন ও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার বিষয়টি একবারেই কম দেখা যায়। এতে এ সময়ের ঘটনার তাৎপর্যকে অনুধাবন করা বেশ খানিকটা সহজ হয়ে ওঠে। কর্মজীবনের শুরু থেকেই, রমন তার কাজের প্রতি অটুট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছিলেন। এটি তার বিশাল জ্ঞান ও দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ঘটনার বিবরণ স্মরণ করার ক্ষমতার সাথে তাকে একজন আদর্শ গোয়েন্দা কর্মকর্তা করে তুলেছে। এই বিরল গুণাবলি কাও এবং তার অনেক উত্তরসূরিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল কিছু কাজের দায়িত্ব রমনকে অর্পণ করতে প্ররোচিত করেছিল। এ কারণে রমনের, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, বার্মা এবং চীন সম্পর্কে বিশ্লেষণ গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের জন্য হতে পারে একটি সম্পদ।