রক্তাক্ত, সহিংস সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এই বিরোধের মধ্যে আটকা পড়েছিল বিহারিরা, যারা ছিল একটি সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম গ্রুপ, যারা মূলত ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা ভারত-ভাগের সময় ভারতীয় রাজ্য বিহার থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) এসেছিল। এই বইয়ের লেখক আজমত আশরাফ, যিনি নিজে একজন বিহারি, তার বয়স যখন এক, তখন তার পরিবার ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে চলে এসেছিলেন। দুই দশকেরও কম সময় পরে তারা যখন নিজেদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য জীবন নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল, তখন বাংলাদেশের ঝঞ্ঝাপূর্ণ জন্মের সময় তার পরিবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছিল, যাতে আজমত আশরাফের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হয়েছিল। আজমত আশরাফ আবার রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ২০০২ সালে, তাঁর প্রথম অভিবাসনের প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে, তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ তিনি তার আবাসস্থলের মহাকাব্যিক সফর সমাপ্ত করেন। এই বইটি হলো একটি পরিবারের বেঁচে থাকা ও একের পর এক অকল্পনীয় ট্র্যাজেডির মধ্যেও পুনরায় তাদের জীবন নির্মাণ করার লড়াইয়ের স্মৃতিকথা। অশুভের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে-থাকা প্রাণশক্তির, সত্যিকার ভালোবাসা ও সত্যিকার বন্ধুত্বের কাহিনি এটি। যে রিফিউজিগণ এই বিশ্বের সর্বত্র নিরাপদ একটি জায়গা লাভের জন্য এবং উন্নতি করার জন্য লড়াই করছেন, তাদের জন্য প্রেরণার উৎস এটি। আজমত আশরাফ ও তাঁর পরিবারের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির পরও তিনি ১৯৭১ সালের দ্বন্দ্বের একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ তুলে ধরার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যাতে সাধারণভাবে উপমহাদেশের মানুষজন এবং বিশেষত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণ তাদের পারস্পরিক ইতিহাসের এই বেদনাময় অংশটি অনুধাবন করতে পারে। আজমত আশরাফ সস্ত্রীক কানাডার অনটারিও প্রদেশে বসবাস করেন। তাঁদের বিকাশমান পরিবারে রয়েছে তিন পূর্ণবয়স্কা কন্যা, তাদের স্বামীগণ এবং তিনজন প্রিয় নাতিনাতনি। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার আজমত একজন উৎসাহী পাঠক, নানা স্থানে ঘুরে- বেড়ানো পর্যটক এবং ইতিহাসের ছাত্র। তিনি নিরন্তর আশাবাদী এবং মানুষের মানবিকতায় বিশ্বাসী এক মানুষ।