"সীতায়ন" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: জন্ম থেকে জীবনের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত অভাবিত দুর্ভাগ্যের তমসা যাঁর ছায়াসঙ্গিনী, তাকেই সন্ধানী আলােয় নবরূপে নবতর আবিষ্কারের প্রয়াস। কেবল রামায়ণের ধ্বনিসাম্যে সীতায়ন নয়, এই ধ্রুপদী উপন্যাস জনকনন্দিনী সীতার জীবন-পরিক্রমার এক আধুনিক গদ্যগাথা। ষষ্ঠত্রিংশতি বর্ষে উপনীতা সীতা তখন সন্তানসম্ভবা। এই অললাকসামান্যা চিরন্তনী সেই মুহূর্তে হােমশিখার মতাে পবিত্র মাতৃত্বের বিভায়। বহু আকাঙ্ক্ষিত সুখমরুৎ-এর স্পর্শ অনুভব করছেন তিনি। সহসা প্রজানুরঞ্জক রাম লােকাপবাদের ভয়ে বৈদেহীকে বিসর্জনের সংকল্প নিলেন। তাঁর আদেশে নৈমিষারণ্যে বাল্মীকির। আশ্রমসংলগ্ন একটি স্থানে সীতাকে নির্বাসনে রেখে গেলেন লক্ষ্মণ। গর্ভিণী স্ত্রী ও গর্ভস্থ সন্তানকে উপেক্ষা করে দাশরথি সেদিন রাষ্ট্রতত্ত্বকে উচ্চে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আর্য-রাষ্ট্রতত্ত্ব আসলে হৃদয়হীন পুরুষশাসনের আগ্রাসন ও বিবিধ উদ্দেশ্যসাধনের শস্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। চির দুঃখের পথে চলতে চলতে লবকুশের জননী এই সত্যটি উপলব্ধি করে হয়ে উঠেছিলেন এক পরিবর্তিত, আত্মনির্ভর, স্বয়ম্প্রভ সীতা। কিন্তু কীভাবে ? কোন্ তপশ্চর্যায় ? তারই নিবিড় আলেখ্য মল্লিকা সেনগুপ্তের এই অভিনব উপন্যাস।
মল্লিকা সেনগুপ্তর জন্ম ২৭ মার্চের ১৯৬০ সালে ভারতের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে। তাঁর কবি জীবন শুরু ১৯৮১ সালে এবং সেই থেকে তিনি ১১টি কবিতার বই, দুটি উপন্যাস এবং বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা কেন্দ্রে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ৯০ এর দশকে তিনি অপর্ণা সেন সম্পাদিত 'সানন্দা' পত্রিকার কবিতা বিভাগের সম্পাদনা করতেন। স্বামী সুবোধ সরকারের সাথে তিনি 'ভাষানগর' নামক একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। মল্লিকার কবিতা আপষহীন রাজনৈতিক ও নারীবাদী হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখনির গুণে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাঁর লেখা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাকে সুকান্ত পুরস্কার, বাংলা একাদেমি এ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ ফর লিটারেচার দিয়ে সম্মানিত করেছেন। ইতিহাসের ব্রাত্য নারী চরিত্ররা প্রায়ই তাঁর লেখায় পুনর্জীবিত হয়েছেন। সমসাময়িক কবি সংযুক্তা দাসগুপ্তের ভাষায় "তার কবিতায় নারীস্বত্বা কেবলমাত্র অন্তর্ভূতি সচেতনতা হিসেবেই থেকে যায় না, সেটা প্রস্ফুটিত হয় সমস্ত প্রান্তিক নারীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদ।"