কবিতা মানুষের অধিগম্য শব্দ সমষ্টির বিন্যাস মাত্র। রাতের নক্ষত্র প্রহর, কবির জোছনা বিলাসী মন কখনো কখনো ষড়ঋতুর পথ পরিক্রমায় ‘ধূলিধূসরিত বসন্ত’ হয়ে যায়। প্রেমের রঙিন স্বপ্ন, বসন্তের মাতাল হাওয়া কবিতায় রূপান্তরিত করে অনির্বাণ শিখায় প্রজ্বলিত করাই কবির ধ্যান—জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাময় প্রচেষ্টা। কবি নূরুল্লাহেল বাকী তাঁর ‘ধূলিধূসরিত বসন্ত’ কাব্যগ্রন্থে হৃদয়ে সঞ্চিত কল্পনা এবং চিন্তাপ্রসূত অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা দিয়ে কবিতার পঙ্ক্তিমালা নির্মাণ করেছেন। আধুনিক কাব্যে প্রাণ ও প্রকৃতির মিলন সন্ধিক্ষণে কবি তাঁর বোধের গোপন গুহায় আশ্রয় দেন কবি সত্তাকে। কবি সিদ্ধি লাভ করেন তাঁর নিজস্ব জগতে, যেখানে কাব্য সৃষ্টির পরিবেশ তিনি নিজেই সৃষ্টি করেন। কবি ধূলিধূসরিত কবিতায় লিখেছেন ‘নব পত্রপল্লবে আচ্ছাদিত শাখে/ কোকিলের কুহুতান/পুষ্পিত কানন/ ভ্রমরের গুঞ্জন/ প্রজাপতির বিচরণ/ তৃষিত নয়ন/ তাপিত প্রাণ/ করে আনচান/ শিরায় শিরায় নেই শিহরণ। ভাবনার অদৃশ্য উপকরণ দিয়ে কবি সৃষ্টি করেছেন কবিতার প্রাসঙ্গিকতা। ‘ভালোবাসার বিশেষত্ব’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, হৃদয়ে ঠাসা অফুরন্ত ভালোবাসা/ অকাতরে বিলিয়ে যাই/ পরিবার—পরিজন আত্মীয় স্বজন/ সুহৃদ শুভাকাঙ্ক্ষী কাছে যারে পাই। অপূর্ব হৃদয়গ্রাহী ভালোবাসার বন্দনা কবিমনে ভাবগত দর্শন, বুদ্ধিবৃত্তিক মোড়লিপনা জীবনবোধে কাব্য রসের সঞ্চার করলেই কেবল তা অক্ষর বিন্যাসে কবিতা হয়ে ওঠে। তাঁর কবিতাগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় প্রেমের সিম্ফনি, ভালোবাসার ব্যাপ্তি চন্দ্রনিলীমা অতিক্রম করেছে। শুধু মানব প্রেম নয়, স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা তাঁর কবিতাকে অলংকৃত করেছে। কবিতা রূপায়নে সহজ শব্দ প্রয়োগ ও ভাষার প্রাঞ্জলতা কবিতাপ্রেমী পাঠককে আকৃষ্ট করবে সহজেই। কবি নূরুল্লাহেল বাকী’র ‘ধূলিধূসরিত বসন্ত’ কবিতাগ্রন্থের কবিতার শিরোনামগুলো নান্দনিক-- ভালোবাসার উপাখ্যান, দাম্পত্য কথন, বিচ্ছেদে বিষাদ, অষ্টাদশী প্রেয়সী মম, অতঃপর প্রেম, আরাধ্য প্রেয়সীর তুমি, অভিমানের মায়াজালে, যৌবনের আদিম উন্মত্ততা, অতৃপ্ত আত্মা, ঋতুরাজ এলো আজ, বসন্তের আবির্ভাব, অব্যক্ত ইতিবৃত্ত ইত্যাদি কবিতাগুলো সুহৃদ পাঠক হৃদয়কে পরিতৃপ্ত করবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রেমিক কবি নূরুল্লাহেল বাকী প্রেমের সৌন্দর্য অন্তরে ধারণ করে গড়ে তুলবেন কবিতার সুরম্য প্রাসাদ এ প্রত্যাশা অহর্নিশ।