এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ—উর্দু কথাসাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাভাষায় উর্দুসাহিত্য পড়েছেন, অথচ আলতামাশকে পড়েননি, এমন পাঠক বোধহয় নেই। তার উপন্যাসগুলো মাতিয়ে রেখেছে কয়েক প্রজন্মের কৈশোর ও তারুণ্য; বড়রাও তার পাঁড় পাঠক। গল্পের অক্টোপাস দিয়ে পাঠককে তিনি এমনভাবে আটকে রাখেন, কাহিনি গিলে হজম না করা পর্যন্ত যার হাত থেকে নিস্তার নেই। আলতামাশের লেখার জনপ্রিয়তা নিয়ে কিছু না বললেও চলবে। পাঠকের মনে জিইয়ে আছে এর মোহন। কিন্তু তার ব্যক্তিজীবনের ব্যাপারে অনেকের জানাশোনা না-ও থাকতে পারে। কেননা এ অঞ্চলে ঔপন্যাসিক আলতামাশ যতটা সরব, ব্যক্তি আলতামাশ ততটাই নীরব। তাই এটা বললে অত্যুক্তি হবে না, পাঠকেরা আলতামাশের লেখা পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে জিজ্ঞাসিত হলে মুখ হাঁ করে থাকেন। সুখের কথা হচ্ছে, পাঠকদের এই দুরবস্থা থেকে রেহাই দিয়ে গেছেন আলতামাশ নিজেই। পৃথিবীতে তিনি কাটিয়েছেন এক মহাকাব্যিক জীবন। দুহাত ভরে যেমন লিখেছেন, তেমনি দুচোখ ভরে দেখেছেন জগৎটা। হয়েছেন বিশ্বইতিহাসের অংশ এবং জীবন্ত সাক্ষী। সেই বিপুল অভিজ্ঞতায় ভরপুর জীবনের আখ্যান অক্ষরবন্দি করেছেন মনজিল ও মুসাফির নামে। এটিই তার জাদুকরী আত্মজীবনী। এই বইতে পাঠক আবিষ্কার করবেন এক অন্য আলতামাশকে। গল্প-উপন্যাসে তিনি যেমন অক্টোপাস দিয়ে পাঠককে আটকে রাখেন, এই বইয়ে এটি ছাড়াও রয়েছে এক অদৃশ্য মায়া। কাহিনির ধারাস্রোতে মন ভাসালে তা এমন এক মায়াপুরীতে নিয়ে যাবে, যেখানে গিয়ে এর সংজ্ঞা নির্ণয়ে ধাঁধায় পড়ে যাবেন। ভাবতে থাকবেন—এটি কি সত্যিই আলতামাশের আত্মজীবনী, না তার ভ্রমণকাহিনি, নাকি কোনো উপন্যাস?