আশ্চর্য হই! স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পরও মানুষের প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। মানুষের চাইতে হয় বাঁচার অধিকার, কথা বলার অধিকার, বৈষম্যহীনতার অধিকার। তবে কি আমরা স্বাধীন নই? আমরা কি এখনো একাত্তরপূর্ব শোষিত সমাজে বসবাস করছি? এখনো কি সেই বৈরী হাওয়ায় উত্তাল এই বাংলা? এখনো কি আমাদের আকাশ সেই কালো মেঘে ঢাকা? মেঘ কেটে আমরা যে এনেছিলাম রক্তিম সূর্য; তার আলোয় আমরা কি প্রভাবান্বিত হইনি? আমরা কি সেই সূর্যের চেতনা হারিয়ে ফেলেছি? রক্তের রেখা ভুলে গেছি? সাদা শাড়ির আঁচলে থাকা শূন্য অবয়ব ভুলে গেছি? তাঁর তর্জনী কণ্ঠস্বর ভুলে গেছি? ভুলে গেছি কি স্বাধীন সত্তা? ব্যথিত হই- মানচিত্রের দিকে তাকালে, মানুষের দিকে তাকালে, শকুনের আঁচড়ে আমার এই দেশ। এখানে লাশ, ওখানে লাশ, শকুনের বলিখেলা। মানুষের মানচিত্রের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ধূসর মানচিত্রের। কোন চক্রের দিকে আমার জাতি? কোন চক্রের লোভ-লালসার শিকার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল? এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও মানুষের হাহাকার, মানুষের মৃত্যুর মিছিল, জনসমুদ্রে উত্তাল রেসকোর্স। এখনো মানুষ প্রতিক্ষায় ৭ মার্চের। আবারও কি তাঁর আগমন প্রয়োজন? আবারও কি তাঁর বিদ্রোহী কবিতার প্রয়োজন? আবারও কি প্রয়োজন রাজপথে আন্দোলন? আমাদের আর স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন স্বাধীন মনুষ্যত্বের। আমাদের যুদ্ধের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শান্তির গান। আমাদের আন্দোলনের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন সত্যের গণজাগরণ। আমাদের অমাবস্যার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন পূর্ণিমা রাত। প্রয়োজন প্রশান্তির ঘুম। আসুন, আমরা রাজপথে আসি, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- এই দেশ আমার, আঠারো কোটি মানুষের। আমরা বাঙালি, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রে বিশ্বাসী। জনগণের জন্য সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র। এই সমাজ আমার, এই দেশ আমার, এই রাষ্ট্র আমার। আসুন, আমরা রাজপথে আসি, দেশকে ভালোবাসি। বিভেদ ভুলে মুখোমুখি বসি, বলি- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
কবি হারুন অর রশিদ ১৯৯২ সালের ১৮ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার বলিয়ারদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আশুক আলী ও মাতার নাম ফরিদা বেগম। ‘নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুল’ থেকে এস.এস.সি. এবং ‘বাজিতপুর সরকারি কলেজ’ থেকে এইচ.এস.সি. পাস করেন। এরপর ‘ভৈরব হাজী হাসমত কলেজ’-এ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও তা আর শেষ করা হয়নি। কবির জীবনে সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা সবই যেন জোয়ার-ভাটার মতো ওঠানামা করে। নিজেকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত রাখেন। মনের ভাবকে কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। এরইমধ্যে বের হয়েছে ‘সূর্যোদয়’ ও ‘মনের মানুষ’ শিরোনামে দুটি কাব্যগ্রন্থ। এবার ‘নবকণ্ঠ প্রকাশনী’ থেকে বের হল ‘অবশেষে জেনেছি নিঃসঙ্গতা কী’ কাব্যগ্রন্থটি। কবির জন্য শুভ কামনা রইল।