২০২৪ সালে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন (পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কীভাবে বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস, তা আমাদের সকলের জানা। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল সর্বোচ্চ, তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ হয়েছে স্বৈরশাসকমুক্ত, হয়েছে নতুন করে স্বাধীন যাকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে স্বীকার করছি। বাংলাদেশের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের দিনগুলোতে তথা আন্দোলন চলাকালে একজন ছাত্রকে দেখতে পাওয়া যায়- সে মিছিলে পানি বিতরণ করছে। আর বলছে, ‘পানি লাগবো পানি?’ আন্দোলনে তৃষ্ণার্ত যাদের পানির দরকার পড়ছে, তারা সেই ছেলেটির কাছ থেকে বোতল নিয়ে পানি পান করছে। পানি পান করে তারা আবারও মিছিলে স্লোগান দিচ্ছে, ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। এভাবে আন্দোলনে বেশ কয়েকদিন ছেলেটি পানি বিতরণ করে যায়। কিন্তু ১৮ জুলাই সন্ধ্যার সময় রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছেলেটি পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হলে তার বন্ধু জাকিরুল ইসলাম তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ইমার্জেন্সিভাবে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শেষে ডাক্তার রুম থেকে বের হয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবে শহীদ হয় ছেলেটি। ‘পানি লাগবো পানি’ বলে শহীদ হওয়া ছেলেটির নাম ছিল মুগ্ধ। মুগ্ধের পুরো নাম- মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন। মুগ্ধর বাবার নাম মীর মোস্তাফিজুর রহমান, মায়ের নাম শাহানা চৌধুরী। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও মুগ্ধ ছিল যমজ। মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে। এরপর সে ঢাকা শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) প্রফেশনাল এমবিএ করছিল। মৃত্যুর সময়ও তার গলায় বিইউপির আইডি কার্ডটি রক্তমাখা অবস্থায় ছিল। মুগ্ধর মৃত্যু এই আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য মৃত্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। শহীদ মীর মুগ্ধকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে “পানি লাগবো পানি?” শিরোনামে কাব্যসংকলন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের এই উদ্যোগে দেশ-বিদেশের অসংখ্য লেখক-কবি তাদের স্বরচিত ছড়া-কবিতা জমা প্রদান করেন। সেইসব ছড়া-কবিতা যাচাই-বাছাই করে কাব্যসংকলনটি প্রকাশ করা হলো। যারা মনোনিত হয়েছেন, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। সেইসাথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে যেসকল বীর সন্তান তাদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। - সম্পাদক: শাহ্ মোঃ সফিনূর প্রতিষ্ঠাতা, ইউএস-বাংলা আন্তর্জাতিক সাহিত্য ফোরাম।