“শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র সঙ্গীত স্বরলিপি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে কবিত্ব ও সঙ্গীত প্রতিভার স্বতঃস্ফুর্ত বহিঃপ্রকাশ বাল্যকাল হতেই প্রতীয়মান। এতদ্ভিন্ন শৈশবে, যৌবনে এবং পরিণত কালে রবীন্দ্রনাথ অবিসংবাদিত ভাবে বিরাট বিস্ময়কর প্রতিভা তথা অপূর্ব, অতুল্য সৃজনী শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন সাহিত্যে, গল্পে, প্রবন্ধে, নাটকে, উপন্যাসে এবং সুকুমার বিদ্যা সঙ্গীতে। সমুদ্র যেমন অপার বিস্ময়ের বস্তু, রবীন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভাও তদ্রুপ বিস্ময়ত্বেও বিস্ময়কর। মানুষের সুখ, দুঃখ, আশা, আনন্দ; নৈরাশ্য, শােক, সান্তনা, মিলন, বিচ্ছে, প্রার্থনা, প্রেম, বিরহ ইত্যাদি বহুবিধ ভাবরস তাঁর গানে বিরাজিত। এতদ্ভিন্ন মানবের শাশ্বত হৃদয়ের অতি সুক্ষ্মতম অনুভূতিগুলাে রবীন্দ্রনাথ অতি সুনিপুন এবং সুশৃঙ্খলভাবে তাঁর কথা ও সুরের অপূর্ব লালিত্যে রূপায়িত করে জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। তাঁর গানে জগৎ হয়েছে বিমুগ্ধ । রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশ্বের বিদগ্ধ বিদ্বৎ সমাজের হৃদয় জয় করেছে তার সুরের রূপে, রসে এবং বিভিন্ন সুবৈচিত্রে এবং সুকলা-কৌশলে। তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট কথা ও সুরের অভিন্ন মিলন তথা অপূর্ব সঙ্গমতীর্থ । গানের ভাষার সঙ্গে সুরের এই অত্যন্তিক সংযােগ এবং সংগতি রবীন্দ্রনাথের এক অনুপম সম্প্রদান। বাংলা গানে কথার সঙ্গে সুরের এই সুনীবিড় সমন্বয় সংস্থাপন করে রবীন্দ্রনাথ এক নতুন মার্গের সন্ধান দিয়েছিলেন। তাঁর গান তৎপূর্ববর্তীকালের বাংলা গান হতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। যার ভাব, ভাষার সৌষ্ঠব ও সুরের ভঙ্গী এবং কলা-কৌশল ও বক্তব্য পৃথক । যে গান বাংলা গানের জগতে এক যুগান্তর এনে দেয় এবং অতি স্পষ্টতই সে গানের নাম হয়ে পড়ে “রবীন্দ্র সঙ্গীত”। রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গানই শ্রেষ্ঠ। এতদসত্বেও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুবিধার্থে তাদের অতি প্রয়ােজনীয় কিছু গান, রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন স্বর বিতান হতে সংগ্রহ করে পুস্তকাকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে করে, অত্র শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র সঙ্গীত স্বরলিপি গ্রন্থ দ্বারা রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চাকারী ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।