বিগত কয়েক সহস্রাব্দে ভারতীয় নারীর অবস্থা বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। প্রাচীনযুগ থেকে মধ্যযুগে, তাদের অবস্থার অবনতি আর কয়েকজন সমাজসংস্কারকের প্রচেষ্টায় আবার সমমর্যাদার অধিকারে উত্তরণের ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। আধুনিক ভারতে নারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন ।
ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত নারীর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত মূল বিষয়গুলি হল সাম্য, মর্যাদা, বৈষম্য থেকে স্বাধীনতা। এছাড়াও, নারীর অধিকার সংক্রান্ত বহু বিধি প্রযোজ্য ২০১৮ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি, লোকসভার (সংসদের নিম্নকক্ষ) অধ্যক্ষ, লোকসভার বিরোধী দলনেতা তিনটি পদই অলংকৃত করেন মহিলারা। যদিও আজও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মহিলারা লিঙ্গবৈষম্য ও অপরাধের শিকার।
মধ্যযুগী ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং বাল্যবিয়ের প্রচলন এবং বিধবাদের পুনর্বিবাহের নিষেধাজ্ঞা ভারতে কিছু সম্প্রদায়ের সামাজিক জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসকদের আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গেই ভারতীয় সমাজে পর্দা প্রথার প্রচলন ঘটে। রাজস্থানের রাজপুতদের মধ্যে জওহর প্রথার প্রচলন ছিল। ভারতে কিছু অংশে, দেবদাসীরা কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার হন । রাজনৈতিক কারণে হিন্দু ক্ষত্রিয় শাসকদের মধ্যে বহুবিয়ে প্রথা প্রচলিত ছিল। অনেক মুসলিম পরিবারে, নারীর গতিবিধি বাড়ির অন্দরমহলেই সীমাবদ্ধ ছিল খুব অল্প সংখ্যক গ্রন্থেই স্ত্রী আচার ও মহিলাদের ক্রিয়াকলাপ মূল উপজীব্য বিষয়। তবে, ১৭৩০ সালে তাঞ্জৌরের জনৈক রাজকর্মচারী ত্রম্বকোয়জ্যন রচিত স্ত্রী ধর্ম পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রথম শ্লোকটি হল:
এই পরিস্থিতিতেও, রাজনীতি, সাহিত্য, শিক্ষা ও ধর্ম সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু বিশিষ্ট নারীর সন্ধান পাওয়া যায়। রাজিয়া (১২০৫-১২২০) একমাত্র মহিলা সুলতান যিনি দিল্লি শাসন করেছেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে মুগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি আসাফ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারানোর আগে গোন্দ - রানী দুর্গাবতী ১৫ বছর (১৫২৪-১৫৬৪) রাজ্যশাসন করেছিলেন। চাঁদ বিবি ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে আকবরের শক্তিশালী মুগল বাহিনীর বিরুদ্ধে আহমদনগরকে রক্ষা করেছিলেন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানের রাজ্যশাসনে কার্যকরী ভূমিকা ছিল এবং তিনি মুঘল সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত ক্ষমতা হিসেবে পরিগণিত হতেন। মুঘল রাজকুমারী জাহানারা ও জিবুন্নিসা ছিলেন বিখ্যাত কবি এবং তাঁরা ক্ষমতাসীন শাসকদেরও প্রভাবিত করেছিলেন। যোদ্ধা এবং প্রশাসক হিসেবে তাঁর দক্ষতার শিবাজীর মা জিজাবাইকে শাসক বা রাজপ্রতিনিধির মর্যাদা দিয়েছিল। তারাবাই ছিলেন আরেকজন মহিলা মারাঠা শাসক । দক্ষিণ ভারতে অনেক নারী গ্রাম, শহর ও বিভাগ পরিচালনা করেন এবং নতুন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।