"পার্লামেন্টের অন্দরমহলে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: কমুনিস্টদের লালদুর্গ বলে পরিচিত যাদবপুর লােকসভা কেন্দ্র থেকে পর পর তিনবার। জয়ী হয়ে কৃষ্ণা বসু রাজনীতি বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছিলেন। তাঁর সেই তিনবারের পার্লামেন্টারি জীবনের অভিজ্ঞতা এই বইয়ে বিধৃত হয়েছে। রাজনীতিতে তাঁর উৎসাহ ছিল ছেলেবেলা থেকে। বিবাহসূত্রে এসে পড়েছিলেন বাংলার এক স্বনামধন্য রাজনীতিক পরিবারে। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কথা চিন্তাও করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে তিনি তাঁর লেখাপড়া-সাহিত্য-সংগীত-শিল্পকলার জগৎ থেকে অকস্মাৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে এসে পড়েন। বেশ এক অস্থির রাজনীতির সময়ে তাঁর পার্লামেন্টারি জীবন। কেন্দ্রে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য শেষ হয়ে কোয়ালিশন যুগের সূচনা হয়েছে। তিনি দেখেছেন দেবগৌড়া, গুজরাল ও বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের কাল দেখেছেন। বাংলায় কংগ্রেস দু’ভাগ হয়ে তৃণমূলের জন্ম, সেই জন্মলগ্ন থেকে তিনি মমতার সাথী। বিদেশমন্ত্রক পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে। আফগানিস্তানের সংকট, ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার নূতন সম্পর্কের সূচনা দেখেছেন কাছে থেকে। রাজনীতির পাশাপাশি তাঁর গৃহজীবনের সুখদুঃখের কথা রয়েছে। স্বচ্ছন্দভাবে তিনি বিচরণ করেছেন। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও তাঁর জনসেবকের ভূমিকায়। এই কাহিনি তাই যেমন সুখপাঠ্য তেমনি একাধারে এক বিশেষ সময়ের রাজনীতিক ও সামাজিক দলিল।
কৃষ্ণা বসু ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩০-এ ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হচ্ছেন চারু সি. চৌধুরী এবং মাতা ছায়া দেবী চৌধুরানী। তার পিতা ছিলেন সাংবিধানিক অধ্যয়ন বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সচিব। ১৯৫৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি শিশির কুমার বসুকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই পুত্র, সুমন্ত্র বসু, সুগত বসু এবং এক কন্যা শর্মিলা বসু। শিশির বসু শরৎ চন্দ্র বসুর পুত্র, সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় ভাই। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর বি.এ ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ভাটখন্দ সঙ্গীত ইনস্টিটিউট, লখনউ, উত্তর প্রদেশ থেকে সম্মানিত সঙ্গীত-বিশারদ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ৪০ বছর শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং আট বছরের জন্য কলেজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বসু সক্রিয়ভাবে জনস্বার্থে কাজ করেছেন। তিনি কলকাতা ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট এবং নেতাজি গবেষণা ব্যুরো কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, "বিবেক চেতনা" এর প্রেসিডেন্ট – যেটি হচ্ছে অনগ্রসর নারী ও শিশুদের জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা এবং আর্ন্তজাতিক পি.ই.এন এর একজন সদস্য।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] কৃষ্ণা বসু ইংরেজী ও বাংলা ভাষার কিছু পত্রিকার কলামিস্ট ছিলেন। যেমন: দেশ, আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, অমৃত বাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান, টেলিগ্রাফ, ইলাস্ট্রেড উইকলি অব ইন্ডিয়া। তিনি নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্যও কাজ করেছেন।