বামুনের মেয়ে : জাতিভেদ প্রথা, অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার মানুষের জীবনটাকে কিভাবে বিষাদময় করে তোলে, তারই উপমা দিয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “বামুনের মেয়ে” উপন্যাসে।
আত্মহত্যার অধিকার : বর্ষাকালেই ভয়ানক কষ্ট হয়। ঘরের চালটা একেবারে ঝাঁঝরা হইয়া গিয়াছে। কিছু নারিকেল আর তাল-পাতা মানসম্রম বজায় রাখিয়াই কুড়াইয়া সংগ্রহ করা গিয়াছিল। চালের উপর সেগুলি বিছাইয়া দিয়া কোনো লাভ হয় নাই। বৃষ্টি নামিলেই। ঘরের মধ্যে সর্বত্র জল পড়ে। বিছানাটা গুটাইয়া ফেলিতে হয়, ভাঙা বাক্সপেটরা কয়টা এ কোণে টানিয়া আনিতে হয়, জামাকাপড়গুলি দড়ি হইতে টানিয়া নামাইয়া পুঁটলি করিয়া, কোথায় রাখিলে যে ভিজিবে কম, তাই নিয়া মাথা ঘামাইতে হয়। বড় ছেলেটা কাঁচা ঘুম ভাঙিয়া কাঁদিতে আরম্ভ করে। আদর করিয়া তাহার কান্না থামানো যায় না, ধমক দিলে কান্না বাড়ে। মেয়েটা বড় হইয়াছে, কাঁদে না; কিন্তু ওদিকের দেয়ালে ঠেস দিয়া বসিয়া এমন করিয়াই চাহিয়া থাকে যে নীলমণির ইচ্ছা হয় চড় মারিয়া ওকেও সে কাঁদাইয়া দেয়। এতক্ষণ ঘুমাইবার পর এক ঘণ্টা জাগিয়া বসিয়া থাকিতে হইল বলিয়া ও কী চাহনি? আকাশ ভাঙিয়া বৃষ্টি নামিয়াছে, ঘরের চাল সাত বছর মেরামত হয় নাই। ঘরের মধ্যে জল পড়াটা নীলমণির এমন কী অপরাধ যে মেয়েটা তাকে ও-রকম ভাবে নিঃশব্দে গঞ্জনা দিবে? ছোট ছেলেটাকে বুকের মধ্যে লুকাইয়া নিভা একবার এধার একবার ওধার করিয়া বেড়াইতেছিল। হঠাৎ বলিল, ওগো, ছাতিটা একবার ধরো, একেবারে ভিজে গেল যে! লক্ষ্মী, ধরো একবার ছাতিটা খুলে। ওরও কি শেষে নিমুনিয়া হবে? নীলমণি বলিল, হয়তো হবে। বাঁচবে।
দুই বোন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত একটি উপন্যাস। এটি ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি পরকীয়া সম্বন্ধীয় একটি মিলনান্তক উপন্যাস।
শর্মিলা ও ঊর্মিমালা দুই বোন। শর্মিলার স্বামী শশাঙ্কের সঙ্গে ঊর্মিমালার ঘনিষ্ঠতা তাদের সকলের জীবনে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তারই নাটকীয়তাময় রূপায়ণ এই উপন্যাসে পরিলক্ষিত হয়। উপন্যাসটিতে পুরুষের পক্ষে দুই নারীকে দুইভাবে ভালোবাসার ফলে জটিলতার সৃষ্টি হয় আর নারীর পক্ষে সেই জটিলতার সমাধান দেখানো হয়েছে।
দৃষ্টি প্রদীপ : এই উপন্যাসের নায়ক জিতু। জিতু এক ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্র। এই উপন্যাসে জিতু তার বড় ভাই নিতাই ও বোন সীতাসহ তার পরিবারকে দেখা যায় দার্জিলিং-এ। সেখানে তাদের সাথে মিস নর্টন নামের এক খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক মহিলার পরিচয় হয়। সেখানে তাদের বেশ ভালো কাটলেও জিতুর বাবার চাকরি চলে যাওয়ার দরুন তারা আটঘরায় তাদের জ্যাঠামশায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তবে সেখানে জিতুর পরিবারের উপর কেউ বিশেষ খুশি ছিল না। এখানে জিতুর জ্যাঠাইমার উদ্ধত ধনগর্ব ও শুচিতার অহংকার দেখা যায়। জিতু কিছুটা বড় হলে সে শৈলদিদির বাসায় থেকে পড়াশোনা করে এবং সেখানে তার সাথে ছোট বৌঠাকরুনের পরিচয় হয়। এর কিছুকাল পর জিতু কলকাতায় নীলাম্বর রায়ের বাড়িতে চাকরি পায়। তবে সে বেশিদিন ঐ জায়গায় চাকরি করে না। এরই মাঝে জিতুর অমতে এক বিপত্নীক লোকের সাথে সীতার বিয়ে দেয় জিতুর জ্যাঠামশায় এবং নিতাই বিয়ে করে। এর কিছুদিন পর জিতুর মা মারা যায়। জিতু কিছুসময় দাদার সাথে কাটিয়ে ঘুরতে ঘুরতে দ্বারবাসিনী গ্রামে এক আখড়াবাড়ির সন্ধান পায়। এখানকার বৈষ্ণবী মালতীর সঙ্গে জিতুর একধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে
Title
বাংলা সাহিত্যের শাশ্বত ঔপন্যাসিকগণের কালজয়ী উপন্যাস সমগ্র
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।