আল্লাহর বাণী, “তোমাদের উপর যুদ্ধ (কিতাল) ফরজ করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে কোনো এক বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার হয়তোবা, কোনো একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয়, অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুত : আল্লাহই (কোনোটি কল্যাণকর) জানেন, তোমরা জানো না ।” (সূরা বাকারা, আয়াত : ২১৬)
মানবতার মুক্তিদূত হযরত রাসূল (সা) তার দাওয়াতি জীবনের শুরু থেকেই সাহাবীদের ইসলামের করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের চর্চার মাধ্যমেই মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ জাতির মর্জাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন। মহানবীর (সা) অতুলনীয় জীবন চরিত্রে উজ্জীবিত সাহাবীগণও পরিচয় দিয়েছেন ইসলামের অন্যতম অনুসারি হিসাবে। ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্র জীবনব্যবস্থা,সামরিক এবং আন্তর্জাতিক জীবন ব্যবস্থা কেমন হবে- তার সর্বাধুনিক ও মার্জিত দিক-নির্দেশনা পেয়ে যেতেন মহানবীর (সা) জীবনার্দশ থেকে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। হিজরী সনের ২য় বর্ষের ১৭ই রমযানে সংঘটিত এই যুদ্ধে মুসলমানদের একটি সুশৃঙ্খলাবদ্ধ নমনীয় শান্তিকামীর পাশাপাশি বিশ্ববিজয়ের দুরন্ত-সাহসী হিসাবে বেড়ে উঠার প্রেরণা যুগিয়েছে।
মহানবীকে (সা) দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য র্সম্পকে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি তার রাসূলকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) ও সত্য দ্বীন (জীবনবিধান) সহকারে, যাতে প্রকাশ্য-বিজয়রূপে স্থাপন করতে পারেন দ্বীন ইসলামকে সব দ্বীনের (বিধান ও মতবাদ) উপর; আর সাক্ষী ও সাহায্যকারী হিসাবে আল্লাহেই যথেষ্ট।” (সূরা ফাতেহ, আয়াত : ২৮)
মহানবী (সা) যুদ্ধে নেতৃত্ব¡ দিয়েছেন। তরবারী ব্যবহারের চেয়ে ক্ষমাই ছিল তার যুদ্ধনীতির মূল প্রেরণা। শিশু, নারী, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে নেই-তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র না ধরতে তার নির্দেশ ছিল সর্বদা। শত্রুর সম্পদ বিনষ্ট না করতেও তার নির্দেশ থাকত। মৃত শত্রুর দেহ বিকলাঙ্গ না করা এবং যুদ্ধবন্দীদের প্রতি সব সময়ই মানবিক ব্যবহার ছিল তার সমরনীতির অত্যাবশ্যকীয় অংশ। শত্রুপক্ষের কাছ থেকে শান্তি বা সন্ধির প্রস্তাব পেলে যুদ্ধের বদলে একেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করেননি কখনই।
শুধু বীরত্ব নয়, পৃথিবীতে অনেক জাতি বীরত্ব দেখিয়েছেন, সমর-কৌশলের উন্নত নমুনা সবজাতির মধ্যেই কম-বেশি দেখা গেছে। কিন্তু বীরত্বের পাশাপাশি মানবতা ও মনুষ্যত্ব, যুদ্ধের ময়দানে কিংবা যুদ্ধ পরবর্তীতে বিজিত মানুষদের যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। এই একক বিশেষ বৈশিষ্ট্যর জন্যে অন্যান্য জাতি বিজয়ী হয়েও যেখানে বিজিতের কাছে নিন্দিত হয়েছে, সেখানে মুসলমানরা হয়েছে সমাদৃত। তাইতো, আমরা দেখতে পাই মাত্র অর্ধশতাব্দীর মধ্যে অর্ধবিশ্ব পদানত করেছিল যে জাতি, তার নাম মুসলমান। এই মুসলমানদের অংগুলি হেলনে সেসময়ের বহৎৃ দুটি পরাশক্তি রোমান ও পারস্যের বিশাল সাম্রাজ্য ধুলিসাৎ হয়েছিল। তাদের অভিযান এতোটাই দ্রুত, বিজয় এত ব্যাপক এবং ফলাফল এত সুদূরপ্রসারী ছিল যে, ইতিহাসে মুসলমানদের কীর্তির পাশে স্থান পাওয়ার মতো কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়নি। সে সময়ের বৃহৎ দুই পরাশক্তিকে ধ্বংস করে একমাত্র গ্রহণযোগ্য শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল মুসলমানরা।
ইতিহাসের সেরা মুসলিম বীরযোদ্ধাদের তালিকায় প্রথমে রাসূল (সা) ও তার সাহাবীদের নাম। তাদের দেখানো পথে হেটেছেন অন্যান্যরা। যুগে যুগে বহু মুসলিম শাসক ও সেনাপতিরা মানুষের কল্যানের জন্যে লড়াই করে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন বিশ্বজুড়ে। তাদের তরবারীর ঝলকানি দেখে কম্পিত হয়ে উঠত জালেম কাফেরদের অন্তরাত্মা। আর এভাবে মুহুর্তেই শক্তিশালী অমুসলিম রাষ্ট্র পদানত হয়ে যেত তাদের কাছে । রণকৌশল, দুঃশাহস ও বীরত্বে তারা ছিল অতুলনীয়।
এই মুসলমানদের শৌর্য-বীর্য, মানবতা-মনুষ্যত্বের কাহিনী শুনলে গল্পের মত মনে হয়। তবুও তা ইতিহাস। আজকের মুসলমানদের সামনে এই বীর জাতির ইতিহাস তুলে ধরা জরুরী। কেননা তাদের জানতে হবে, কোনো জাতির বংশধর তারা। বিশ্বকে যারা জয় করেছে মাত্র ৫০ বছরে এবং শাসন করেছে হাজার বছর ধরে। আজকে যারা গৃহহীন হয়ে ঘুরে বেড়াছে, আপন ঘরে বসে মার খাচ্ছে তাদের জন্য- মুসলিম বিবেক কি শুধুই নিন্দাপ্রস্তাব অথবা মৌখিক প্রতিবাদ করেই দায়িত্ব সম্পন্ন করবে? নাকি শিয়ালের মত শতবছর না বেঁচে সিংহের মত একদিন বাঁচবে? নাকি মুসলিম সমরনেতাদের দ্বারা প্রণীত সামরিক পরিকল্পনা ও নীতিমালা গ্রহণ করে এগিয়ে যাবে মুসলমানরা।
এবইয়ে মুসলিম সমরনেতা ও বীরযোদ্ধাদের ঈমানদীপ্ত হূদয়ছোয়া অমর রণকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যা হয়তো বা ইতিহাসের পট পরিবর্তন করবে মুসলিম মুল্যবোধকে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে।